Header Ads

ad728
  • Breaking News

    Bean Cultivation (শিম উৎপাদন প্রযুক্তি)

    শিম উৎপাদন প্রযুক্তি

    জমিঃ

    দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটিতে শিম ভাল ফলন হয়।

    জমি তৈরি

    বেশী জমিতে আবাদ করা হলে কয়েকটি চাষ ও মই দেয়া ভাল। মাদার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতার আকার ৪৫ সেন্টিমিটার রাখতে হবে।

    মাদার দুরত্ব

    এক মাদা থেকে অন্য মাদার দুরত্ব ১.৫০ মিটার।

    প্রতি মাদার জন্য সারের পরিমাণ

    গোবর ১০ কেজি, খৈল ২০০ গ্রাম, ছাই ২ কেজি, টিএসপি ১০০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম। মাদা তৈরি করার সময় এসব সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজালে ১৪ থেকে ২১ দিন পর পর দু’কিস্তিতে ১২.৫ গ্রাম করে ইউরিয়া ও ১২.৫ গ্রাম করে এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।

    জাত পরিচিতি

    দেশে পঞ্চাশটিরও বেশি স্থানীয় শিমের জাত আছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বাইনতারা, হাতিকান, চ্যাপ্টাশিম, ধলা শিম, পুটিশিম, ঘৃত কাঞ্চন, সীতাকুন্ডু, নলডক ইত্যাদি। বারি শিম ১, বারি শিম ২, বারি শিম ৩, ইপসা শিম ১, ইপসা শিম ২, একস্ট্রা আর্লি, আইরেট ইত্যাদি আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত। নিচে কয়েকটি আধুনিক জাতের শিমের পরিচয় দেয়া হল-

    বারি শিম ১ঃ 
    মাঝারি আগাম জাত। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসে বীজ বপন করতে হয়। প্রতিটি শিমের ওজন ১০-১২ গ্রাম, শিমে ৪-৫ টি বীজ হয়, গাছ প্রতি ৪৫০-৫০০ টি শিম ধরে। জীবনকাল ২০০-২২০ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন ২০-২২ টন।

    বারি শিম ২ঃ 
    আগাম জাত। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসে বীজ বপন করতে হয়। প্রতিটি শিমের ওজন ৭-৮ গ্রাম, লম্বা ১০-১৩ সেমি, শিমে ৪-৫ টি বীজ হয়, গাছ প্রতি ৩৮০-৪০০ টি শিম ধরে। জীবনকাল ১৯০-২১০ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন ১২-১৪ টন।

    বারি শিম ৩ঃ 
    সারা বছর চাষ করা যায়। গ্রীষ্ম মৌসুমেও চাষের উপযোগী। শিমের রঙ বেগুনি। প্রতিটি শিমে গড়ে ৪-৫ টি বীজ হয়। হেক্টর প্রতি ফলন গ্রীষ্মকালে ৯-১০ টন, শীতকালে ১৫-১৮ টন।

    বারি শিম ৪ঃ 
    আগাম জাত। আষাঢ়-শ্রাবন মাসে বীজ বপন করতে হয়। হেক্টর প্রতি ফলন ১৬-১৮ টন।

    বারি শিম ৫ঃ 
    আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসে বীজ বপন করতে হয়। লম্বা ৯-১০ সেমি, জীবনকাল ৭৫-৮৫ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন ১২-১৪ টন।

    বারি শিম ৬ঃ 
    লম্বা ২০-২২ সেমি, গাছপ্রতি পডের সংখ্যা ২৫০-৩০০, জীবনকাল ২২০-২৫০ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন ১৭-২০ টন।

    ইপসা শিম ১ঃ 
    সারা বছর চাষ করা যায়। গ্রীষ্ম মৌসুমেও চাষের উপযোগী। শিমের রঙ বেগুনি। প্রতিটি শিমে গড়ে ৫ টি বীজ হয়। হেক্টর প্রতি ফলন ৫-১০ টন।

    ইপসা শিম ২ঃ 
    সারা বছর চাষ করা যায়। গ্রীষ্ম মৌসুমেও চাষের উপযোগী। শিমের রঙ সাদাটে সবুজ। প্রতিটি শিমে গড়ে ৪ টি বীজ হয়। হেক্টর প্রতি ফলন ৭-৮ টন।

    পরিচর্যা

    কোন অবস্থাতেই গাছের গোড়ায় পানি যাতে না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে জমিতে প্রয়োজন মত সেচ দিতে হবে। মাঝে মাঝে মাটি নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে। এছাড়া গাছ যখন ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বা হবে তখন মাদার গাছের গোড়ার পাশে বাঁশের ডগা মাটিতে পুঁতে বাউনির ব্যবস্থা করতে হবে।

    রোগ ব্যবস্থাপনা

    শিমের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ দু’টি- মোজেইক ও অ্যানথ্রাকনোজ।

    মোজাইক রোগ (Mosaic)

    রোগের কারণ- Potato virus Y (PVY), Tomato masaic virus (TMV)

    রোগের লক্ষণ

    গাছের যে কোন বৃদ্ধি স্থরেই এ রোগ হতে পারে। চারা অবস্থায় আক্রান্ত- হলে গাছ সবচে’ বেশি ক্ষতিগ্রস্থ- হয়। এ অবস্থায় বীজ গজানোর পর বীজপত্র হলুদ হয়ে যায় এবং পরে চারা নেতিয়ে পড়ে। বয়স্ক গাছে প্রথমে ডগার মাথায় কচি পাতায় এ রোগের লক্ষণ দেখা যায়। এ রোগের আক্রমণে পাতায় হলুদ সবুজ ছোপ ছোপ মোজেইকের মত দাগ দেখা যায়। দাগগুলো অসম আকারের। দ্রুত বড় হয়। শেষে দাগগুলো সম্পূর্ণ পাতাই ছেয়ে ফেলে। আক্রান- পাতা ছোট, বিকৃত, নীচের দিকে কোঁকড়ানো ও বিবর্ণ হয়ে যায়। এমনকি শিরা-উপশিরাও হলুদ হয়ে যায়। লতার পর্বমধ্য খাটো হয়ে আসে। ফলে গাছ খাটো হয়ে যায়। সাধারণতঃ ফল ধরেনা। ধরলেও কচি ফল খসখসে, ছোট ও ফুটকি দাগযুক্ত হয়। মাঝে মাঝে ফলের রং সাদাও হয়ে যায়। ফুল কম আসে এবং অধিক আক্রমণে পাতা ও গাছ মরে যায়। Myzus persicae I Aphis gossipii প্রজাতির জাব পোকা দ্বারা এ ভাইরাস রোগ ছড়ায়। তবে বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। টমেটোর হলদে ভাইরাসের দু’টি প্রজাতি আছে। একটি পাতার রঙ হলুদ করে, অন্যটি বেগুনী করে। অল্প বয়সী গাছ আক্রান্ত- হলে ফল ধরার আগেই মারা যায়।

    অনুকূল অবস্থা

    সাদা মাছি দ্বারা এ রোগ ছড়ায়। তাই ক্ষেতে সাদা মাছি থাকলে রোগ বেশি হয়।


    দমন ব্যবস্থাপনা

    ১. আক্রান্ত- গাছ দেখলেই প্রাথমিকভাবে তা তুলে ধ্বংস করা।
    ২. ক্ষেতের আগাছা পরিস্কার রাখা।
    ৩. ক্ষেতে বাহক পোকার উপস্থিতি দেখা দিলে নোভাস্টার ৫৬ ইসি ০২ মিলি/লিটার অথবা পিমিডর /হেমিডর ৭০ডব্লিউজি ০২গ্রাম/১০লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করে তা দমন করা যায়।
    রোগাক্রান্ত- গাছ থেকে কোন বীজ সংগ্রহ ও ব্যবহার না করা।

    এ্যানথ্রাকনোজ বা ফলপঁচা (Anthracnose)

    রোগের কারণ- Colletotrichum melogenae, C. capsici, Lindeimuthianum sp.

    দমন ব্যবস্থাপনা

    ১. এ রোগ একবার হলে সে জমিতে পরপর তিন বছর বেগুন জাতীয় কোন ফসল চাষ না করা।
    ২. রোগমুক্ত ভাল বীজ ব্যবহার করা।
    ৩. রোগাক্রান্ত- ফল ও গাছ সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। এমনকি ফসল সব তোলার পর গাছের অবশিষ্টাংশ জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা।
    ৪. জমি সব সময় সুনিষ্কাশিত রাখা।
    ৫. ঝরণা দিয়ে গাছে পানি সেচ না দেয়া।
    ৬. ফল পুরোপুরি না পাকিয়ে ক্ষেত থেকে তুলে নেয়া।
    ৭. সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে একরোবেট এমজেড ০৪গ্রাম/লিটার অথবা ডিফেন্স ৩৫ এসসি ০২মিলি/লিটার অথবা কোগার ২৮এসসি ০১মিলি/লিটার বা স্কোর ০১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রমণের শুরুতেই প্রয়োগ করা। 

    কান্ড পঁচা (Stem rot)

    রোগের কারণ- Sclerotinia sclerotiorum

    রোগের লক্ষণ

    এ রোগ চেনার সহজ লক্ষণ হল গাছের পাতা, বোঁটা ও কান্ডে নরম, জলজলা সাদাটে রঙের পচন। গাছের যেখানে এরূপ পচন হয় সে জায়গা থেকে উপরে আর খাদ্য ও পানি চলাচল করতে পারে না। ফলে উপরের অংশ মরে যায়। প্রথমে পাতায় সংক্রমণ শুরু হয়। পরে বোঁটা থেকে কান্ডে যায়। পচার পর যদি আর্দ্রতা বেশি থাকে তবে সেখানে সাদা তুলার মত ছত্রাক সূত্র দেখা যায় যা এ রোগ সনাক্তের একটি অন্যতম উপায়। এসব ছত্রাকসূত্রের মধ্যে পরে সরিষা দানার মত কালচে ছত্রাক বীজাণু বা স্পোর দেখা যায় যাকে বলে স্কেলোরোশিয়া। এর মধ্যেই এ রোগের জীবাণু সুপ্তাবস্থায় থাকে এবং অনুকুল পরিবেশে অংক্লুরিত হয়।

    অনুকূল পরিবেশ

    অধিক আর্দ্রতা কিন্তু ঠান্ডা আবহাওয়ায় এ রোগ বেশি হয়।

    দমন ব্যবস্থাপনা


    ১. দু’বছর পর পর ধান চাষের উপযোগি জমি হলে সেখানে এক মৌসুমে ধান চাষ করা। জমি ২৩-৪৫ দিন প্লাবিত করে রাখলে এ রোগের স্কেলোরোশিয়া মারা পড়ে।

    ২. জমি গভীর করে চাষ দিয়ে মাটি কয়েকদিন রোদে শুকানো। চাষের সময় জমিতে খড় পোড়ানো যেতে পারে।

    ৩. যেহেতু গাছের গোড়ায় ঝুলে থাকা পাতা মাটিতে লাগলে মাটি থেকে এ রোগের জীবাণু সংক্রমিত হয় তাই গোড়ার পাতা পরিস্কার করে দিলে উপকার হয়।

    ৪. রোগ প্রবণতা থাকলে একটু বেশি দূরে দূরে চারা রোপণ করা।
    ৫. নালা পদ্ধতিতে সেচ দেয়া।
    ৬. ট্রাইকোডার্মা ব্যবহার করেও ভাল ফল পাওয়া যায়।
    ৭. রোদে বীজতলা ও মূল জমির মাটি বীজ বপন বা চারা রোপণের আগে শোধন করে নিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
    ৮. ডিফেন্স ৩৫ এসসি বা প্রোভেক্স দ্বারা বীজ শোধন করে চারা তৈরি করলে গাছ কম মরে।
    ৯. সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে একরোবেট এমজেড ০৪গ্রাম/লিটার অথবা ডিফেন্স ৩৫ এসসি ০২মিলি/লিটার অথবা কোগার ২৮এসসি ০১মিলি/লিটার বা স্কোর ০১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রমণের শুরুতেই প্রয়োগ করা। 

    তবে শিমের বীজ ফসলে অবশ্যই ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে বীজ রোগমুক্ত রাখা উচিত।




    শিমের ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকাঃ 

    ১. আক্রান্ত ডগা ও ফল সংগ্রহ করে মাটিতে পুতে ফেলুন এরপর রিজেন্ট ৫০এসসি ও হেক্লেম ৫এসজি প্রতি লিটার পানিতে ০১মিলি ও ০১গ্রাম করে মিশিয়ে স্প্রে করুন;
    ২. ৩- ৪ দিন পর হেক্লেম ৫এসজি ও নোভাস্টার ৫৬ইসি ( প্রতি লিটার পানিতে ০১ গ্রাম ও ০২ মিলি) মিশিয়ে স্প্রে করুন;
    ৩. মাঝে মধ্যে স্পিনোসাড দিয়ে স্প্রে করলে পোকার সহনশীলতা গড়ে উঠে না।

    কখনো শুধু রিজেন্ট; শুধু হেক্লেম দিয়ে স্প্রে করুন এতে পোকার সহ্য ক্ষমতা সৃষ্টি হয়না; সফলভাবে দমন করার জন্য ৩-৪ দিন পরপর স্প্রে করুণ;
    মনে রাখবেন ফল সংগ্রহ করার পর বিকালে স্প্রে করতে হবে:

    সাদা মাছি, জাবপোকা, জ্যাসিডঃ

    নোভাস্টার ৫৬ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০২মিলি বা পিমিডর বা হেমিডর ৭০ডব্লিউজি ০৩গ্রাম/১৫লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।



    Bean Field