Pointed gourd Pest Management (পটলের পোকামাকড় ও রোগ বালাই)
পটলের পোকামাকড় ও রোগ বালাইঃ
ফলের মাছি পোকা
ফলের মাছি পোকা কচি ফলের ভেতর ছিদ্র করে ও ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে ক্রীড়া বের হয়। এরা ফলের নরম অংশ খেয়ে পূর্ণ বয়স্ক পোকা বের হয়ে আসে।
প্রতিকার
১. ক্ষেত পরিষ্কার রাখা।
২. পোকা দমনে ফাঁদের ব্যবহারও ব্যাপক জনপ্রিয়।
৩. বিষটোপ আরেকটি জরুরি দমন উপাদান। এ ছাড়া সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করা সম্ভব।
৪. আক্রমণ মারাত্মক হলে রিপকর্ড/ রিজেন্ট/ হেক্লেম প্রতি লিটার পানিতে ০১ মিলি হারে মিশিয়ে ৫-৭ দিন পরপর ৩ থেকে ৪ বার স্প্রে করেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
কাটলে পোকা (এপিল্যাকনা বিটল)
কাটলে পোকা পূর্ণাঙ্গ ও ক্রীড়া অবস্খায় গাছের ক্ষতি করে থাকে। এ পোকা পাতার সবুজ অংশ খেয়ে জালের মতো ঝাঝড়া করে ফেলে। পাতা শুকিয়ে গাছ পাতা শূন্য হয়ে পড়ে। আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে গাছ মারা যেতে পারে।
১. আক্রমণের প্রাথমিক অবস্হায় পাতাসহ ডিমের গাদা বা পোকার গ্রাব হাত দিয়ে তুলে বা হাতজাল ব্যবহার করে ধ্বংস করতে হবে।
প্রতিকার
১. পটলের মাঠ সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
২. ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম নিমবীজের মিহিগুঁড়া এক লিটার পানিতে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পানি ছেঁকে নিয়ে ওই পানি আক্রান্ত পাতাসহ সব গাছে স্প্রে করতে হবে।
৩. ইন্ট্রাপিড ১০ এসসি এর ০২ মিলি বা মিপসিন ৭৫ ডব্লিউপি ২.৭ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছের পাতা ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।
লাল মাকড়
আক্রান্ত পাতা শক্ত চামড়ার মতো হয় এবং পাতা বিবর্ণ হয়ে ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। লাল মাকড় আকারে অত্যন্ত ছোট হয়। এরা পাতার নিচের দিকে অবস্থান করে। এদের আক্রমণে পাতা শক্ত চামড়ার মতো হয়ে কুঁকড়ে যায়। ব্যাপক আক্রমণের ফলে সম্পূর্ণ পাতা হলুদ ও বাদামি রঙ ধারণ করে এবং ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। ফলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং ফলন অনেক কমে যায়।
প্রতিকার
১. এক কেজি আধা ভাঙা নিমবীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে ওই পানি পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা।
২. আক্রমণের হার বেশি হলে ইন্ট্রাপিড/ টলস্টার/ নোভাস্টার (প্রতি লিটার পানিতে ০২ মিলি মিশিয়ে) ৫ থেকে ৭ দিন পরপর স্প্রে করা।
পটলের রোগ ও প্রতিকার
শিকড়ের গিট রোগ
পটলের শিকড়ে গিট রোগ মারাত্মক সমস্যা। কৃমির আক্রমণে এ রোগ হয়। এর আক্রমণে আক্রান্ত গাছে ছোট-বড় অনেক গিঁটের সৃষ্টি হয়। ফলে এদের মূল নষ্ট হয়ে খাবার নিতে পারে না। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। গাছ খাটো হয়ে পড়ে। ফলন মারাত্মক কমে যায়।
প্রতিকার
১. পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করা। সরিষা, মরিচ, গম, ভুট্টা ইত্যাদি দ্বারা ফসল চক্র করা। ২. পটল রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে একর প্রতি মুরগির বিষ্ঠা ১ থেকে ১.৫ টন বা সরিষার খৈল ১৭৫ থেকে ২০০ কেজি মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দেয়।
৩. ফুরাডান ৫জি ১৬ থেকে ১৮ কেজি/একর লতা লাগানোর সময় এবং পরবর্তী ৪ মাস পর পুনরায় প্রয়োগ করতে হয়।
পাউডারি মিলডিউ
এ রোগে পাতার উপরে সাদা সাদা পাউডার দেখা যায় যা পাতা নষ্ট করে যায়। পাতার ওপরের দিকে ও কাণ্ডে পাউডারের মতো ছত্রাকের জীবাণুর প্রলেপ পড়ে। এতে ক্রমান্বয়ে কচি পাতা আক্রান্ত হয়। আক্রমণের প্রথম স্তরে দাগগুলো সাদা ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে সম্পূর্ণ পাতা শুকিয়ে যায়।
প্রতিকার
১. আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলা। পরিমিত সার, সেচ প্রয়োগ।
২. হেসালফ ০২গ্রাম/লিটার বা হেকোনাজল ০১মিলি/লিটার বা হেমেনকোজেব ০৪ গ্রাম/লিটার রোগ দেখা মাত্র ৫-৭ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করতে হবে।
কাণ্ডের রস ঝরা
এর ফলে শীতের সময় পটল গাছের কাণ্ড ফেটে যায় এবং এক ধরনের আঁঠালো পদার্থ নি:সৃত হয়। এটা পরবর্তীকালে বাতাসের সংস্পর্শে এসে শক্ত হয়ে কাণ্ডের সাথে লেগে যায়।
প্রতিকার
১. একরোবেট এমজেড ০৪ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রমণের সময় এবং ৫ থেকে ৭ দিন পরপর ৩ বার স্প্রে করা।
২. বর্দোমিক্সার ব্যবহার করা অথবা সালকক্স ৫০% ডব্লিউপি ০৬ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
চারার মড়ক
১. গোড়ায় কালো দাগ ধরে চারা মারা যায়।
২. মরা চারা উপড়ে ফেলতে হবে, তবে বীজ শোধন করে বুনলে সাধারণত এই রোগ হয়না। Defense 35SC (০.৪%) বা প্রোভেক্স (.০২%) দিয়ে বীজ শোধন করা যেতে পারে।
৩. Acrobat MZ প্রতি লিটারে ৪ গ্রাম বা Defense 35SC ০১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।
ঢলে পড়া
ছোট বড় উভয় অবস্থায় গাছের শিকড়ে এই রোগের জীবাণু আক্রমণ করে, ফলে গাছ ঢলে পড়ে।
জমিতে পানি থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে। ক্ষেত আবর্জনা মুক্ত রাখতে হবে। পাট কাটার পর গোড়া, শিকড় ও অন্যান্য পরিত্যাক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
Acrobat MZ প্রতি লিটারে ৪ গ্রাম বা Defense 35SC ০১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।
কান্ডপঁচা
কান্ডে গাঢ় বাদামী রং এর দাগ দেখা দেয় এবং দাগের উপর বহু কালো বিন্দু দেখা যায়। এই রোগে গাছ ভেংগে পড়ে।
আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলতে হবে। পাট কাটার পর গোড়া, শিকড় ও অন্যান্য পরিত্যাক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। বীজ শোধন করে বুনতে হবে। জমিতে পানি নিকাশের ভাল ব্যবস্থা থাকতে হবে।
Acrobat MZ প্রতি লিটারে ৪ গ্রাম বা Defense 35SC বা Cougar 28SC ০১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।
কালো পট্টি
কান্ডে কালো বেষ্টনীর মত দাগ পড়ে এবং হাত ঘষলে হাতে কালো দাগ লাগে। এই রোগে গাছ ভেংগে পড়ে না, তবে শুকিয়ে মারা যায়।
প্রথমে রোগাক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
Acrobat MZ প্রতি লিটারে ৪ গ্রাম বা Defense 35SC বা Cougar 28SC ০১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে।