Header Ads

ad728
  • Breaking News

    Wheat Cultivation (আধুনিক গম উৎপাদন প্রযুক্তি)

    আধুনিক গম উৎপাদন প্রযুক্তি

    গম (Wheat)

    পুষ্টি মূল্যঃ 
    গম হতে যে আটা হয় তার প্রতি ১০০ গ্রাম আটায় আমিষ ১২.১ গ্রাম, শর্করা ৬৯.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৮ মিলিগ্রাম, লৌহ ১১.৫ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৯ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.৪৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.২৯ মিলিগ্রাম, আঁশ ১.৯ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ২.৭ গ্রাম এবং জলীয় অংশ থাকে ১২.২ গ্রাম।

    ভেষজ গুনঃ
    ব্যবহারঃ গম সাধারণত মানুষের রুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া গমের কুঁড়া গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

    উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ 
    উঁচু ও মাঝারি দোআশ মাটি গম চাষের জন্য বেশী উপযোগী। লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয়।

    গমের জাতঃ 
    বর্তমানে এদেশে অধিক আবাদকৃত গম জাতের মধ্যে রয়েছেঃ-
    ১. কাঞ্চন, ২. আকবর, ৩. অঘ্রাণী, ৪. প্রতিভা, ৫. সৌরভ (বারি গম-১৯), ৬. গৌরব (বারি গম-২০), ৭. শতাব্দী (বারি গম-২১), ৮. সুফী (বারি গম-২২), ৯. বিজয় (বারি গম-২৩), ১০. প্রদীপ (বারি গম-২৪), ১১. বারি গম-২৫, ২৬, ২৭, ২৮ প্রভৃতি।

    বপনের সময়ঃ 
    গমের উচ্চ ফলনশীল জাতসমূহের বপনের উপযুক্ত সময় হল কার্তিক মাসের শেষ থেকে অগ্রহায়ণর তৃতীয় সপ্তাহ (নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত)। যে সব এলাকায় ধান কাটতে ও জমি তৈরী করতে বিলম্ব হয় সে ক্ষেত্রে কাঞ্চন,আকবর, প্রতিভা, গৌরব ও বারি গম-২৬ বপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

    বপনের পদ্ধতিঃ 
    সারিতে বা ছিটিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। সারিতে বপনের জন্য জমি তৈরীর পর লাঙ্গল দিয়ে সরু নালা তৈরী করে ২০ সেমি দূরত্বের সারিতে ৪-৫ সেমি গভীরে বীজ বুনতে হয়।

    সার ব্যবস্থাপনাঃ 
    সেচসহ চাষের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ইউরিয়া সারের দুই তৃতীয়াংশ এবং সম্পূর্ণ টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম শেষ চাষের পূর্বে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকী এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া প্রথম সেচের সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সেচছাড়া চাষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সার অর্থাৎ ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। গম চাষে নীচে উল্লেখিত হারে সার ব্যবহার করা প্রয়োজন।

    সারের নাম সারের পরিমান সেচসহঃ
    ইউরিয়া ১৮০-২২০ কেজি, টিএসপি ১৪০-১৮০ কেজি
    এমপি ৪০-৫০কেজি, জিপসাম ১১০-১২০ কেজি
    গোবর/কম্পোষ্ট ৭-১০ টন

    সেচছাড়া সারের পরিমান/হেক্টরঃ
    ইউরিয়া- ১৪০-১৮০ কেজি, টিএসপি-১৪০-১৮০ কেজি
    এমপি-৩০-৪০ কেজি, জিপসাম-৭০-৯০ কেজি
    গোবর/কম্পোস্ট- ৭-১০ টন

    সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ
    মাটির প্রকার ভেদে সাধারণত ২-৩টি সেচের প্রয়োজন হয়। প্রথম সেচ চারার তিন পাতার সময় (বপনের ১৭-২১ দিন পরে), দ্বিতীয় সেচ গমের শীষ বের হওয়ার সময়। (বপনের ৫৫-৬০ দিন পর) এবং তৃতীয় সেচ দানা গঠনের সময় (বপনের ৭৫-৮০ দিন পর) দিতে হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলে সাথে সাথে আগাছা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

    পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনাঃ

    রোগ ব্যবস্থাপনাঃ

    গমের পাতার মরিচা রোগ দমনঃ 
    পাক্সিনিয়া রিকন্ডিটা (puccinia recondita) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রথমে পাতার উপর ছোট গোলাকার হলুদাভ দাগ পড়ে। শেষ পর্যায়ে এই দাগ মরিচার মত বাদামি বা কালচে রংয়ে পরিনত হয়। হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা ঘষা দিলে লালচে মরিচার মত গুড়া হাতে লাগে। এ রোগের লক্ষণ প্রথমে নিচের পাতায়, তারপর সব পাতায় ও কান্ডে দেখা যায়। দেশের উত্তরাঞ্চলে এ রোগ বেশী হয়ে থাকে।

    প্রতিকারঃ
    ১. রোগ প্রতিরোধী গমের জাত কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরবের চাষ করতে হবে। 
    ২. সুষম হারে সার প্রয়োগ করতে হবে। 
    ৩. ডিফেন্স ৩৫এসসি বা কোগার ২৮এসসি বা এমিস্টার টপ ছত্রাক নাশক ০১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

    গমের পাতার দাগ রোগ দমনঃ
    বাইপোলারিস সরোকিনিয়ানা (Bipolaris sorokiniana) নামক ছত্রাক এ রোগ ঘটায়। গাছ মাটির উপর আসলে প্রথমে নীচের পাতাতে ছোট ছোট বাদামি ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরবর্তীতে দাগ সমূহ আকারে বাড়তে থাকে এবং গমের পাতা ঝলস দেয়। রোগের জীবাণু বীজে কিংবা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। বাতাসের অধিক আদ্রতা এবং উচ্চ তাপমাত্রা (২৫ ডিগ্রী সে.) এ রোগ বিস্তারের জন্য সহায়ক।

    প্রতিকারঃ
    ১. রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। 
    ২. গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। 
    ৩. প্রতি কেজি গম বীজে ২-৩ মিলি ডিফেন্স ৩৫এসসি বা ২-৩ গ্রাম প্রোভেক্স-২০০  মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। 
    ৪. ডিফেন্স ৩৫এসসি বা কোগার ২৮এসসি বা এমিস্টার টপ ছত্রাক নাশক ০১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

    গমের গোড়া পচা রোগ দমনঃ
    স্কেলেরোশিয়াম রলফসি (Sclerocium rolfsii) নামক ছত্রাক দ্বারা গমের এ রোগ হয়। এই রোগের ফলে মাটির সমতলে গাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়। পরে তা গাঢ় বাদামি বর্ণ ধারণ করে এবং আক্রান্তস্থানের চারিদিক ঘিরে ফেলে। পরবর্তীতে পাতা শুকিয়ে গাছ মারা যায়। রোগের জীবাণু মাটিতে কিংবা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকে। সাধারণত বৃষ্টির পানি, সেচের পানি দ্বারা এক জমি হতে অন্য জমিতে বিস্তার লাভ করে।

    প্রতিকারঃ
    ১. রোগ প্রতিরোধী কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরব জাতের চাষ করতে হবে।
    ২. মাটিতে সব সময় পরিমিত আর্দ্রতা থাকা প্রয়োজন। 
    ৩. একরোবেট এমজেড বা প্রোভেক্স-২০০ নামক ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

    গমের আলগা ঝুল রোগ দমনঃ
    আসটিলেগো ট্রিটিসি (Ustilago tritici) নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। গমের শীষ বের হওয়ার সময় এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। উক্ত ছত্রাকের আক্রমণের ফলে গমের শীষ প্রথম দিকে পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। পরে তা ফেটে যায় এবং দেখতে কালো ঝুলের মত দেখায়। ছত্রাকের বীজকণা সহজেয় বাতাসের মাধ্যমে অন্যান্য গাছে এবং অন্য জমির গম গাছে সংক্রমিত হয়। রোগের জীবাণু বীজের ভ্রুণে জীবিত থাকে। পরবর্তী বছর আক্রান্ত বীজ জমিতে বুনলে বীজের অংকুরোদগমের সময় জীবাণুও সক্রিয় হয়ে উঠে।

    প্রতিকারঃ
    ১. রোগ প্রতিরোধী কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরব জাতের চাষ করতে হবে। 
    ২. রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। 
    ৩. ডিফেন্স ৩৫এসসি ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০মিলি হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

    গম বীজের কালো দাগ রোগ দমনঃ
    ডেক্সলেরা প্রজাতির ও অলটারনারিয়া প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা গমের এ রোগ হয়। এ রোগের ফলে গমের খোসায় বিভিন্ন আকারের বাদামি অথবা কালো দাগ পড়ে। বীজের ভ্রুণে দাগ পড়ে এবং পরবর্তীতে দাগ সম্পূর্ণ বীজে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের জীবাণু বীজের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে।

    প্রতিকারঃ
    ১. সুস্থ্য বীজ সংগ্রহ করে বপন করতে হবে। 
    ২. ভিটাভেক্স-২০০ বা প্রোভেক্স-২০০ নামক ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
    ৩. একরোবেট এমজেড ০৪গ্রাম/লিটার বা কোগার ২৮এসসি বা এমিস্টার টপ ০১মিলি পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলে ভাল হয়।

    ফসল সংগ্রহঃ 
    চৈত্র মাসের প্রথম থেকে মধ্য-চৈত্র (মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম) পর্যন্ত কেটে গম সংগ্রহ করতে হয়।


    No comments