Header Ads

ad728
  • Breaking News

    Bean pest management (শিমের রোগ ও পোকা-মাকড় ব্যবস্থাপনা)

    শিমের রোগ ও পোকা-মাকড় ব্যবস্থাপনা

    শিমের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ দু’টি- মোজেইক ও অ্যানথ্রাকনোজ।

    মোজাইক রোগ (Mosaic)
    রোগের কারণ- Potato virus Y (PVY), Tomato masaic virus (TMV)



    শিমের মোজাইক রোগের লক্ষণ

    গাছের যে কোন বৃদ্ধি স্তরেই এ রোগ হতে পারে। চারা অবস্থায় আক্রান্ত- হলে গাছ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ- হয়। এ অবস্থায় বীজ গজানোর পর বীজপত্র হলুদ হয়ে যায় এবং পরে চারা নেতিয়ে পড়ে। বয়স্ক গাছে প্রথমে ডগার মাথায় কচি পাতায় এ রোগের লক্ষণ দেখা যায়। এ রোগের আক্রমণে পাতায় হলুদ সবুজ ছোপ ছোপ মোজেইকের মত দাগ দেখা যায়। দাগগুলো অসম আকারের। দ্রুত বড় হয়। শেষে দাগগুলো সম্পূর্ণ পাতাই ছেয়ে ফেলে। আক্রান- পাতা ছোট, বিকৃত, নীচের দিকে কোঁকড়ানো ও বিবর্ণ হয়ে যায়। এমনকি শিরা-উপশিরাও হলুদ হয়ে যায়। লতার পর্বমধ্য খাটো হয়ে আসে। ফলে গাছ খাটো হয়ে যায়। সাধারণতঃ ফল ধরেনা। ধরলেও কচি ফল খসখসে, ছোট ও ফুটকি দাগযুক্ত হয়। মাঝে মাঝে ফলের রং সাদাও হয়ে যায়। ফুল কম আসে এবং অধিক আক্রমণে পাতা ও গাছ মরে যায়। Myzus persicae I Aphis gossipii প্রজাতির জাব পোকা দ্বারা এ ভাইরাস রোগ ছড়ায়। তবে বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। টমেটোর হলদে ভাইরাসের দু’টি প্রজাতি আছে। একটি পাতার রঙ হলুদ করে, অন্যটি বেগুনী করে। অল্প বয়সী গাছ আক্রান্ত- হলে ফল ধরার আগেই মারা যায়।

    অনুকূল অবস্থা

    সাদা মাছি দ্বারা এ রোগ ছড়ায়। তাই ক্ষেতে সাদা মাছি থাকলে এ রোগ বেশি হয়।

    শিমের মোজেইক রোগ দমন ব্যবস্থাপনা

    ১. আক্রান্ত- গাছ দেখলেই প্রাথমিকভাবে তা তুলে ধ্বংস করা।
    ২. ক্ষেতের আগাছা পরিস্কার রাখা।
    ৩. ক্ষেতে বাহক পোকার উপস্থিতি দেখা দিলে নোভাস্টার ৫৬ ইসি ০২ মিলি/লিটার অথবা পিমিডর /হেমিডর/কনফিডর ৭০ডব্লিউজি ০২গ্রাম/১০লিটার অথবা অটোমিডা বা তুন্দ্রা প্রভৃতি কীটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করে তা দমন করা যায়।

    রোগাক্রান্ত- গাছ থেকে কোন বীজ সংগ্রহ ও ব্যবহার না করা।

    শিমের এ্যানথ্রাকনোজ বা ফলপঁচা (Anthracnose)

    রোগের কারণ- Colletotrichum melogenaeC. capsiciLindeimuthianum sp.



    শিমের এ্যানথ্রাকনোজ রোগের লক্ষণ


    ১. এ রোগের আক্রমনের ফলে শিমের উপর বাদামী রঙের আঁকাবাঁকা এবং একটু ডুবা ধরণের দাগ পড়ে। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় এই সকল দাগে অসংখ্য পিঙ্গল বর্ণের স্পোর জন্মে।



    ২. পাতার উল্টা দিকে শিরা বরাবর সরু সরু গাঢ় লাল অথবা কালো কালো দাগ পড়ে। Collettorichum lindemuthianum নামক ছত্রাকের আক্রমণে শিমে এনথ্রাকনোজ রোগ হয়ে থাকে।

    শিমের এ্যানথ্রাকনোজ রোগ দমন ব্যবস্থাপনা

    ১. এ রোগ একবার হলে সে জমিতে পরপর তিন বছর বেগুন জাতীয় কোন ফসল চাষ না করা।



    ২. রোগমুক্ত ভাল বীজ ব্যবহার করা।


    ৩. রোগাক্রান্ত- ফল ও গাছ সংগ্রহ করে ধ্বংস করতে হবে। এমনকি ফসল সব তোলার পর গাছের অবশিষ্টাংশ জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা।

    ৪. জমি সব সময় সুনিষ্কাশিত রাখা।

    ৫. ঝরণা দিয়ে গাছে পানি সেচ না দেয়া।

    ৬. ফল পুরোপুরি না পাকিয়ে ক্ষেত থেকে তুলে নেয়া।

    ৭. সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে একরোবেট এমজেড ০৪গ্রাম/লিটার অথবা ডিফেন্স ৩৫ এসসি ০২মিলি/লিটার অথবা কোগার বা কারিশমা বা নাভারা ২৮এসসি ০১মিলি/লিটার বা স্কোর ০১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রমণের শুরুতেই প্রয়োগ করা।

    শিমের কান্ড পঁচা (Stem rot)

    রোগের কারণ- Sclerotinia sclerotiorum

    শিমের কান্ড পঁচা রোগের লক্ষণ

    এ রোগ চেনার সহজ লক্ষণ হল গাছের পাতা, বোঁটা ও কান্ডে নরম, জলজলা সাদাটে রঙের পচন। গাছের যেখানে এরূপ পচন হয় সে জায়গা থেকে উপরে আর খাদ্য ও পানি চলাচল করতে পারে না। ফলে উপরের অংশ মরে যায়। প্রথমে পাতায় সংক্রমণ শুরু হয়। পরে বোঁটা থেকে কান্ডে যায়। পচার পর যদি আর্দ্রতা বেশি থাকে তবে সেখানে সাদা তুলার মত ছত্রাক সূত্র দেখা যায় যা এ রোগ সনাক্তের একটি অন্যতম উপায়। এসব ছত্রাকসূত্রের মধ্যে পরে সরিষা দানার মত কালচে ছত্রাক বীজাণু বা স্পোর দেখা যায় যাকে বলে স্কেলোরোশিয়া। এর মধ্যেই এ রোগের জীবাণু সুপ্তাবস্থায় থাকে এবং অনুকুল পরিবেশে অংক্লুরিত হয়।

    অনুকূল পরিবেশ

    অধিক আর্দ্রতা কিন্তু ঠান্ডা আবহাওয়ায় এ রোগ বেশি হয়।


    শিমের কান্ড পঁচা রোগ দমন ব্যবস্থাপনা



    ১. দু’বছর পর পর ধান চাষের উপযোগি জমি হলে সেখানে এক মৌসুমে ধান চাষ করা। জমি ২৩-৪৫ দিন প্লাবিত করে রাখলে এ রোগের স্কেলোরোশিয়া মারা পড়ে।


    ২. জমি গভীর করে চাষ দিয়ে মাটি কয়েকদিন রোদে শুকানো। চাষের সময় জমিতে খড় পোড়ানো যেতে পারে।

    ৩. যেহেতু গাছের গোড়ায় ঝুলে থাকা পাতা মাটিতে লাগলে মাটি থেকে এ রোগের জীবাণু সংক্রমিত হয় তাই গোড়ার পাতা পরিস্কার করে দিলে উপকার হয়।

    ৪. রোগ প্রবণতা থাকলে একটু বেশি দূরে দূরে চারা রোপণ করা।

    ৫. নালা পদ্ধতিতে সেচ দেয়া।

    ৬. ট্রাইকোডার্মা ব্যবহার করেও ভাল ফল পাওয়া যায়।

    ৭. রোদে বীজতলা ও মূল জমির মাটি বীজ বপন বা চারা রোপণের আগে শোধন করে নিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

    ৮. ডিফেন্স ৩৫এসসি বা নোইন বা অটোস্টিন বা প্রোভেক্স দ্বারা বীজ শোধন করে চারা তৈরি করলে গাছ কম মরে।

    ৯. সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে একরোবেট এমজেড ০৪গ্রাম/লিটার অথবা ডিফেন্স ৩৫ এসসি ০২মিলি/লিটার অথবা কোগার বা কারিশমা বা নাভারা ২৮এসসি ০১মিলি/লিটার বা স্কোর ০১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রমণের শুরুতেই প্রয়োগ করা। 



    তবে শিমের বীজ ফসলে অবশ্যই ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে বীজ রোগমুক্ত রাখা উচিত।


    শিমের ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা





    শিমের ফল ছিদ্রকারী পোকা

    ১. শিমের ফল ছিদ্রকারী পোকা শিমের ব্যাপক ক্ষতি করে।

    ২. এই পোকার কীড়ার মাথা গাঢ় বাদামী থেকে কালো রঙের হয়। দেহ হলদে সাদা বর্ণের।

    ৩. কীড়ার পিঠে লম্বালম্বি লালচে ফোঁটা দেখা যায়। পূর্ণাঙ্গ পোকা দেখতে কালচে ছাই রঙের এবং নীচের পাখা সাদা তুলার মত।

    শিমের ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে ক্ষতির লক্ষণ

    ১. ফল ছিদ্রকারী পোকার পূর্ণাঙ্গ পোকা প্রথমে শিম গাছের পাতার নিচে বা ফুলের কুঁড়িতে ডিম পাড়ে।

    ২. ডিম ফুটে কীড়া বের হয়ে এই পোকা শিমের ফুল ও ফলে আক্রমণ করে এবং কচি ফল ছিদ্র করে ভিতরের শাঁস খায়।

    ৩. এই পোকার আক্রমণের ফলে শিমের বীজগুলো আংশিক অথবা সম্পূর্ণ খেয়ে ফেলে। পোকা আক্রান্ত শীমের গায়ে ছিদ্র দেখা যায় ও ছিদ্রের মুখে পোকার বিষ্ঠা দেখা যায়।

    ৪. অনেক সময় উক্ত ছিদ্র মুখে কীড়ার পিছনের অংশও দেখা যায়। এই ছিদ্র মুখ দিয়ে শিমের ভিতরে পানি ঢুকে এবং শিম পচে যায়।

    শিমের ফল ছিদ্রকারী পোকার সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা
    ১. শিমের ফল ছিদ্রকারী পোকা দমন করার জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। 



    ২. নিয়মিত শিমের জমিতে সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। 


    ৩. প্রতি একদিন অন্তর অন্তর শিমের আক্রান্ত ফুল ও ফল সংগ্রহ করে কমপক্ষে একহাত গভীর গর্ত করে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। 

    ৪. ঝরা ফুল, ফল ইত্যাদি সংগ্রহ করে বিনষ্ট করে ফেলতে হবে। 

    ৫. আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক রিপকর্ড ১০ইসি প্রতি লিটার পানিতে এক মি.লি. হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। 

    অথবা
    এরপর রিজেন্ট ৫০এসসি ও হেক্লেম ৫এসজি প্রতি লিটার পানিতে ০১মিলি ও ০১গ্রাম করে মিশিয়ে স্প্রে করুন;

    ৭. ৩- ৪ দিন পর হেক্লেম ৫এসজি ও নোভাস্টার ৫৬ইসি ( প্রতি লিটার পানিতে ০১ গ্রাম ও ০২ মিলি) মিশিয়ে স্প্রে করুন;

    ৮. মাঝে মধ্যে ট্রেসার  (স্পিনোসাড) বা মার্শাল (কার্বোসালফান) দিয়ে স্প্রে করলে পোকার সহনশীলতা গড়ে উঠে না।

    কখনো শুধু রিজেন্ট (ফিপ্রোনিল), কখনো শুধু হেক্লেম/এমাকর/সাসপেন্ড (এমামেকটিন বেনজয়েট) দিয়ে স্প্রে করুন এতে পোকার সহ্য ক্ষমতা সৃষ্টি হয়না; সফলভাবে দমন করার জন্য ৩-৪ দিন পরপর স্প্রে করুণ;
    মনে রাখবেন ফল সংগ্রহ করার পর বিকালে স্প্রে করতে হবে:

    সাদা মাছি, জাবপোকা, জ্যাসিড


    শিমের জাব পোকা

    ১. জাব পোকা শিমের একটি অত্যন্ত মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা। এই পোকা আকারে ছোট, দেহ নরম ও নাশপাতি আকৃতির এবং পা ও শুঙ্গ লম্বাকৃতির হয়। 

    ২. জাব পোকার শিম গাছের কাণ্ড, পাতা এবং ডগা থেকে রস শোষণ করে খায়। 

    ৩. এদের বংশবৃদ্ধি করার ক্ষমতা খুব দ্রুত সেজন্য এই পোকা গাছে আক্রমণ করলে ফলনের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। 

    শিমের জাব পোকার ক্ষতির লক্ষণ

    ১. জাব পোকা অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং প্রাপ্ত বয়স্ক উভয় অবস্থাতেই গাছের নতুন ডগা, পাতা, ফুল, ফল ইত্যাদির রস চুষে খায়।

    ২.  এই পোকার আক্রমণের ফলে শিম গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং পোকা গাছের কচি পাতা ডগার রস চুষে খাওয়ার কারণে শিম গাছ দূর্বল হয়ে যায়। 

    ৩. আক্রমণ বেশি হলে শিম গাছে শুটিমোল্ড ছত্রাকের উপস্থিতি ঘটে এবং পরবর্তীতে গাছ মারা যায়।

    শিমের জাব পোকা, সাদামাছি ও জ্যাসিডের সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

    ১. শিমের জাব পোকা, সাদামাছি ও জ্যাসিড দমন করার জন্য সুষম সার ব্যবহার করতে হবে এবং অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। কারণ অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগে পোকার অধিক বংশ বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।

    ২. যদি শিম গাছে জাব পোকা, সাদামাছি ও জ্যাসিডের আক্রমন দেখা যায় তবে হাত দ্বারা আক্রান্ত পাতা, ডগা, ফুল, ফল সহ পোকা সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে।

    ৩. শিম গাছের জমিতে পরভোজী পোকা যেমনঃ লেডি বার্ড বিটল লালন করতে হবে।

    ৪. নীম গাছের বীজের শাঁস পিষে পানিতে মিশিয়ে শিম গাছে স্প্রে করে এদের দমন করা যায়।

    ৫. প্রতি লিটার পানিতে ২৫ মি.লি. তরল সাবান (ডিটারজেন্ট) মিশিয়ে স্প্রে করে এদের দমন করা যায়। 

    ৬. আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে নোভাস্টার ৫৬ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০২মিলি বা পিমিডর বা হেমিডর বা কনফিডর ৭০ডব্লিউজি ০৩গ্রাম/১৫লিটার পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকেলে স্প্রে করতে হবে। এছাড়াও অটোমিডা, তুদ্রা, স্টারগেট ৪৮এসসি, রিপকর্ড ১০ইসি প্রভৃতি কীটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করা যেতে পারে।


    বরবটিরও রোগ ও পোকা-মাকড় প্রায় একই এবং দমন ব্যবস্থাও একই।


    Bean Field

    No comments