Cucumber Pest Management (শসা গাছের রোগ বালাই দমন)
শসা গাছের রোগ বালাই দমন
শসা গাছের রোগ বালাই দমন এর প্রাকৃতিক পদ্ধতি
১) শসার মাচায় পাখি বসার ব্যবস্থা করে দিন । পাখি ক্ষতিকর সব পোকা খেয়ে এর দমন করতে সহায়তা করে।
২) একধরনের জৈব ফাঁদ পাওয়া যায় বাজার থেকে এগুলো কিনে এনে ব্যবহার করলে অধিকাংশ পোকা মাকড় এর মধ্যে ধরা পড়ে।
৩) জৈব কীটনাশক প্রয়োগ, শসা গাছের রোগ বালাই দমন করতে জৈব কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের কীটনাশক নিম পাতা সেদ্ধ করে বা গাঁদা ফুলের পাতার রস থেকে তৈরি করা যায়। এছাড়া নিমের তেল স্প্রে করেও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কীট পতঙ্গ দমন করা সম্ভব। বর্তমানে বাজারে নিমের তেল কিনতে পাওয়া যায়।
৪) বিষ টোপ ব্যবহার করেও পোকা দমন করা যায়। সে ক্ষেত্রে বিষ টোপ তৈরি করার জন্য ১০০ গ্রাম থেঁতলানো কুমড়ার সাথে ১০০মিলি পানি দিয়ে ২৫ গ্রাম সেভিন বা ২৫মিলি রিপকর্ড ১০ইসি মিশিয়ে এই মিশ্রণটি মাটির পাত্রে ঢেলে টপ বা ড্রামের কাছে রেখে দিন দেখবেন বিভিন্ন রকম পোকা এর মধ্যে আসবে এবং মারা পড়বে। এই বিষ টোপ এর কার্যকারিতা তিন থেকে চার দিন ধরে থাকে। চার দিন পর পর এটি পরিবর্তন করে দিতে হবে।
রাসায়নিক পদ্ধতিতে শসা গাছের রোগবালাই দমন
১) ফ্রুট ফ্লাই
কচি শসা এর মধ্যে ক্ষত সৃষ্টি করে এবং গাছের কচি কড়া পচে ঝড়ে পরে। এই সমস্যা উপশম করতে ছাই ছিটিয়ে দিন অথবা রিজেন্ট ৫০এসসি (ফিপ্রোনিল) বা এমামেকটিন বেনজয়েট বা প্রোফেনোফস প্রয়োগ করুন।
২) শসা গাছের মাছি পোকা দমন
এই পোকা ফল ছিদ্র করে ফলের ভেতর ডিম পাড়ে এবং পরবর্তীতে ঐ ফলের মধ্যে জন্মায় এবং ফল পঁচে যায়৷ এই পোকা দমনের জন্য কচি ফল কাগজ, কাপড় বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে৷ ফল বড় হওয়ার পর যখন খোসা শক্ত হয় তখন আর এই পোকা ফল ছিদ্র করতে পারেনা৷ ক্ষেতে পোকার আক্রমন বেশি বৃদ্ধি পেলে ০১লিটার পানিতে ০১মিলি রিপকর্ড বা রিজেন্ট বা এমামেকটিন জাতীয় কীটনাশক মিশিয়ে স্প্রে করলে পোকা দূর হবে৷ তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, ঔষধ-ছিটানোর কমপক্ষে ৭ দিন পর্যন্ত কোনো ফসল বাজারে বিক্রি বা খাওয়া যাবে না৷
৩) শসা গাছের পাউডারিমিলিডিউ রোগ
এই রোগে পাতার উপর সাদা পাউডার এর মত দেখা যায়, হাত দিয়ে ধরলে পাউডার এর মত উঠে আসে । এর কারণে গাছ দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ে, এবং ফলন হ্রাস পায়৷ এই রোগটি দূর করতে ০২ গ্রাম পরিমাণ হেসালফ বা কুমুলাস বা থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউপি ০১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভাল করে পাতা ভিজিয়ে দিতে হবে৷
৪) শসা গাছের এ্যানথ্রাকনোজ রোগ
এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে পাতায় হলদে দাগ হয়, পরে দাগগুলো বাদামি বা কালো হয়ে ঐ অংশ পচে যায়৷ ফলের বাইরের আবরনে এই বাদামি দাগ দেখা যায় ও ফল পচে যায়৷ এর প্রতিকারের জন্য বীজ লাগানোর পূর্বে বীজ শোধণ করতে হবে৷ ০১ কেজি বীজ ২.৫ গ্রাম প্রোভেক্স ২০০ নামক ঔষধ দ্বারা উত্তমরূপে মিশিয়ে নিন ৷ তাছাড়া রোগ অতিরিক্ত দেখা দিলে ডায়থেন এম বা ইন্ডোফিল বা হেমেনকোজেব ৪০ গ্রাম ১০ লিটার পরিমাণ পানির সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে৷ ক্ষেতে রাসায়নিক ঔষধ দেবার অন্তত সাত দিন পর্যন্ত ঐ ক্ষেতের ফসল বিক্রি অথবা খাওয়া যাবে না ৷ এই রোগ দমনের জন্য ঘরে তৈরি বোর্দ মিশ্রণ আক্রান্ত গাছে ছিটানো যেতে পারে৷ এক শতাংশ জমির জন্য এই বোর্দ মিশ্রণ তৈরির করতে সাড়ে সতেরো লিটার পানির সাথে ৩৫০ গ্রাম পাথুরে চুন ও অন্য সাড়ে সতেরো লিটার পানির সাথে ৩৫০ গ্রাম তুঁতে আলাদা আলাদা ভাবে মাটির পাত্রে মিশাতে হবে৷ পরবর্তীকালে এই দুই মিশ্রণ পুনরায় অপর এক মাটির পাত্রে ভালোভাবে মিশাতে হবে এবং আক্রান্ত গাছে ছিটাতে হবে ৷ ১৫ দিন পর পর এভাবে নতুন মিশ্রণ তৈরি করে ছিটাতে হবে৷ ফসল তোলার পর গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলতে হবে৷
৫) গাছ বড় হয়েছে কিন্তু ফুল কম ধরে এরকম হলে টিএসপি ও এমপি সার প্রয়োগ করুন। গাছের বৃদ্ধি সঠিকভাবে হচ্ছে না এমন হলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করুন। আপনাকে গাছের অবস্থা দেখে তার প্রয়োজন অনুযায়ী সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
No comments