Header Ads

ad728
  • Breaking News

    Banana Cultivation (কলা উৎপাদন প্রযুক্তি)

    কলা উৎপাদন প্রযুক্তি


    কলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল যা সারা বছর পাওয়া যায়। কলাকে প্রাচীন সাহিত্যে কদলি বলা হতো।

    কলাগাছ, কলাপাতা, কলাগাছের শিকড় ও কলা সবই উপকারী। কলাগাছ ও কলাপাতা শুধুমাত্র পশু খাদ্য নয়। এদের আছে আশ্চার্যজনক ভেষজ গুণ। রোগ নিরাময়ে অদ্বিতীয়।

    কলার পুষ্টিগুণ প্রচুর। কলা উপাদেয় খাদ্য। কাঁচা পাকা দুই অবস্থায়ই খাওয়া যায়। কলায় রয়েছে জলীয় অংশ ৭০ গ্রাম, আঁশ ০.৫ গ্রাম, খাদ্য শক্তি (কিলোক্যালরি) ১০৯, আমিষ ০.৭ গ্রাম, চর্বি ০.৮ গ্রাম, শর্করা ২৫.০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১১.০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ২৪ মিলিগ্রাম। নারিকেল ছাড়া আর কোনো খাদ্যেই কলার মতো খাদ্যশক্তি নেই। তাই যে কোনো সময় পরিশ্রান্তে অথবা শক্তিক্ষয়জনিত অবস্থায় কলা আহার করলে শরীর পুনরায় কর্মক্ষম হয়ে উঠবে। নারিকেলে ৩৫.৫৭ গ্রাম চর্বি থাকে। যদিও নারিকেলের শর্করা মাত্র ১০.২২ গ্রাম। নারিকেলে খাদ্য শক্তি ৩৭৬ কিলোক্যালরি। যা প্রচলিত ফলের মধ্যে সর্বোচ্চ। দৈনিক খাদ্য তালিকায় সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিনের খাবারে অন্তত ৬০ গ্রাম ফলাদি থাকা বাঞ্ছনীয়। এ ক্ষেত্রে খাবারে আপনার পছন্দের যে কোনো কলা থাকতে পারে।

    কলা চাষ 
    বাণিজ্যিক ভিত্তিতে যেসব জাতের আবাদ হচ্ছে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হচ্ছে বারিকলা-১ ও বারিকলা-২ (আনাজিকলা), অমৃতসাগর, সবরি, চম্পা, কবরি, মেহেরসাগর, বীচিকলা অন্যতম।

    মাটি : 
    পর্যাপ্ত রোদযুক্ত ও পানি নিকাশের সুবিধাযুক্ত উঁচু জমি কলা চাষের জন্য উপযুক্ত। উর্বর দো-আঁশ মাটি কলা চাষের জন্য উত্তম। চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল ও আগাছামুক্ত করে নিতে হবে।

    চারা রোপণ 
    কলার চারা বছরে ৩ সময়ে রোপণ করা যায়। 

    ১ম রোপণ কাল : 
    আশ্বিন-কার্তিক সবচেয়ে ভালো সময়। 

    ২য় রোপণ কাল : 
    মাঘ-ফাল্গুন ভালো সময়। 

    ৩য় রোপণ কাল : 
    চৈত্র-বৈশাখ মোটামুটি ভালো সময়।

    চারার দূরত্ব : 
    সারি থেকে সারির দূরত্ব ২ মিটার এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ২ মিটার।

    গর্ত তৈরি 
    চারা রোপণের মাসখানেক আগেই গর্ত খনন করতে হবে। গর্তের আকার হবে ৬০ সেমি. চওড়া ও ৬০ সেমি. গভীর। গর্ত তৈরি হয়ে গেলে গোবর ও টিএসপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরে রাখতে হবে।

    চারা রোপণ 
    রোপণের জন্য অসি তেউড় উত্তম। অসি তেউরের পাতা সরু, সুঁচালো এবং অনেকটা তলোয়ারের মতো, গুড়ি বড় ও শক্তিশালী এবং কা- ক্রমশ গোড়া থেকে ওপরের দিকে সরু হয়। তিন মাস বয়স্ক সুস্থ সবল তেউড় রোগমুক্ত গাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়।

    সার ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি

    সারের পরিমান
    জৈব সার - ১৫-২০ কেজি
    ইউরিয়া – ৫০০-৬৫০ গ্রাম
    টিএসপি – ৪০০ গ্রাম
    এমপি – ৬০০ গ্রাম
    জিপসাম – ৩০০ গ্রাম 
    জিংক সালফেট – ১০ গ্রাম 
    বোরিক এসডি – ৫ গ্রাম
    মাটির উর্বরতাভেদে সার ও তার পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।

    অর্ধেক গোবর, টিএসপি ও জিপসাম জমি তৈরির সময় এবং অবশিষ্ট অর্ধেক  গোবর, টিএসপি, জিপসাম এবং ২৫% এমওপি একই সঙ্গে গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। রোপণের দেড় থেকে দুই মাস পর ৪ ভাগের ১ ভাগ ইউরিয়া, এমপি জমিতে ছিটিয়ে ভালোভাবে কুপিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। এর দুই থেকে আড়াই মাস পরপর গাছ প্রতি ৫০ গ্রাম এমপি ও ৭৫গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। মোচা বের হওয়ার পর এই পরিমান দ্বিগুন করতে হবে।

    সেচ 
    চারা রোপণের সময় মাটিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে তখনই সেচ দেয়া উচিত। এছাড়া শুকনো মৌসুমে ১৫-২০ দিন পর পর সেচ দেয়া দরকার। বর্ষার সময় কলা বাগানে যাতে পানি জমতে না পারে তার জন্য নালা থাকা আব্যশক। মোচা আসার পর গাছপ্রতি মাত্র একটি তেউড় বাড়তে দেয়া ভালো।

    রোগ ও প্রতিকার : 
    কলা গাছের প্রধানতম রোগগুলো হচ্ছে পানামা, বানচিটপ ভাইরাস, সিগাটোকা ও কলার দাগ রোগ।

    পানামা রোগঃ
    পানামা রোগ প্রতিকারের জন্য আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত গাছের তেউড় হিসেবে চারা ব্যবহার করা যাবে না।


    Panama


    বানচিটপ ভাইরাস রোগঃ
    বানচিটপ ভাইরাস রোগ প্রতিকারের জন্য আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। গাছ উঠানোর আগে জীবাণু বহনকারী ‘জাব পোকা’ ও ‘থ্রিপস’ কীটনাশক ওষুধ দ্বারা দমন করতে হবে। সুস্থ গাছেও কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে।

    জাব পোকা ও থ্রিপস দমনের জন্য সর্বোত্তম কীটনাশক হলো ইন্ট্রাপিড ১০এসসি (ক্লোরফেনাপাইর), নোভাস্টার ৫৬ইসি (বাইফেনথ্রিন + এবামেকটিন)। এছাড়াও হেমিডর বা পিমিডর ৭০ডব্লিউজি (ইমিডাক্লোপ্রিড) বা এডমায়ার বা ইমটাফও জাব পোকার জন্য ভালো কাজ করে তবে থ্রিপস দমনে খুব বেশি সফল নয়।


    Bunchy Top


    সিগাটোকা রোগঃ
    সিগাটোকা রোগ আক্রান্ত গাছের পাতা পুড়ে ফলতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ০১ মিলি কোগার ২৮এসসি (এজক্সিস্ট্রবিন + সিপ্রোকোনাজল) বা ০১মিলি ডিফেন্স ৩৫এসসি (কার্বেন্ডাজিম + হেক্সাকোনাজল) বা ০.৫ মিলি লিটার টিল্ট ২৫০ইসি (প্রোপিকোনাজল) মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর গাছে ছিটাতে হবে।


    Sigatoka


    বিটল পোকাঃ
    ক) বিটল পোকার আক্রমণে কলার গায়ে বসন্ত রোগের দাগের মতো দাগ হতে দেখলে কলার মোচা বের হওয়ার সময় ছিদ্রবিশিষ্ট পলিথিন ব্যাগ দিয়ে মোড়ে দিতে হবে। 

    খ) মিপসিন ৭৫ডব্লিউপি (মিথাইল আইসোপ্রোকার্ব) ২.৭গ্রাম/লিটার বা ইন্ট্রাপিড ১০এসসি (ক্লোরফেনাপাইর) ০২মিলি/লিটার বা সেভিন স্প্রে করে এই পোকা দমন করা যায়। 


    Beetle of Banana

    যে কোনো ধরনের রোগের প্রতিকারের জন্য রোগ আক্রান্ত মাঠে বার বার কলা চাষ করা যাবে না।

    ফসল সংগ্রহ : 
    কলার চারা রোপণের ১১-১৫ মাসের মধ্যেই সাধারণত সব জাতের কলা পাকার উপযুক্ত হয়। প্রতি হেক্টরে ১২-১৫ টন কলার ফলন পাওয়া যাবে।

    তথ্যসূত্রঃ কৃষি তথ্য সার্ভিস