Header Ads

ad728
  • Breaking News

    Tomato Pest Management (টমেটোর রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা)



    টমেটোর রোগবালাই ও দমন ব্যবস্থাপনা



    টমেটো ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর সবজি। এতে আমিষ, ক্যালসিয়াম ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ এবং ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে প্রায় ৩০ হাজার লোক রাতকানা রোগে আক্রান্ত হয়। এ কারণে পুষ্টির দিক থেকে টমেটোর গুরুত্ব অনেক বেশি। অন্যান্য ফসলের মতো টমেটোও বিভিন্ন রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত হয়। রোগের কারণে ব্যাপক ফলন হ্রাস পায় এবং চাষিরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। বাংলাদেশে টমেটো ফসলে যেসব রোগ দেখা যায়, আলোচনার সুবিধার্থে আমরা সেসব রোগবালাই মোটামুটি চার ভাগে ভাগ করতে পারি-



    ১. ছত্রাকজনিত রোগ যেমন- নাবি ধ্বসা, আগাম ধ্বসা ও ঢলে পড়া।


    ২. ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যেমন- ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট বা নেতিয়ে পড়া।

    ৩. ভাইরাসজনিত রোগ যেমন- মোজাইক ও পাতা কোঁকড়ানো।

    ৪. নেমাটোডজনিত রোগ যেমন- শিকড়ের গিঁট ইত্যাদি।

    নাবি ধ্বসা রোগ 
    এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। গাছের আক্রান্ত অংশ, বীজ, মাটি ও পানি দ্বারা এ রোগ বিস্তার লাভ করে। এ রোগের আক্রমণে টমেটো গাছের পাতায় বিভিন্ন আকারের ভেজা বাদামি বর্ণের দাগ পড়ে। দাগগুলো তাড়াতাড়ি বাড়তে থাকে। পাতা পচে যায়। শুষ্ক ও আর্দ্র আবহাওয়ায় পাতার পচন দ্রুত বিস্তার লাভ করে। কয়েক দিনের মধ্যে গাছ মারা যায়। টমেটো ফল আক্রান্ত হলে তাতে ধূসর বর্ণের দাগ পড়ে। ৯১ থেকে ১০০ ভাগ আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ রোগের ছত্রাক দ্রুত বিস্তার লাভ করে।


    দমন ব্যবস্থাপনা 

    ১. ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। 

    ২. নীরোগ বীজ ব্যবহার করতে হবে। 

    ৩. শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে। 

    ৪. রোগের লক্ষণ দেখার সঙ্গে সঙ্গে একরোবেট এমজেড (ম্যানকোজেব+ডাইমেথোমরফ্) ০৪গ্রাম/লিটার বা হেডলাইন টিম (পাইরাক্লস্ট্রাবিন+ডাইমেথোমরফ্) ২.৫০গ্রাম/লিটার বা হেমেনকোজেব বা রিডোমিল গোল্ড বা ইন্ডোফিল এম-৪৫ বা ডায়থেন এম-৪৫ প্রভৃতি ০৪গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।

    রোগের প্রকোপ বেশি হলে উপরের ছত্রাকনাশকগুলোর সাথে কার্বেন্ডাজিম যেমন- ডিফেন্স ৩৫এসসি বা নোইন বা অটোস্টিন প্রভৃতি মিশাতে হবে।

    আগাম ধ্বসা রোগ
    এটিও একটি ছত্রাকজনিত রোগ। গাছের আক্রান্ত অংশ ও বীজের মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। অত্যধিক শিশির, ঘনঘন বৃষ্টি এবং ২৩ থেকে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। এ রোগের আক্রমণে পুরনো পাতায় বাদামি বা ধূসর বাদামি বর্ণের গোল চক্রাকার দাগ পড়ে। পরে অন্য পাতায় এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। পাতার কিনারা বিবর্ণ হয়ে যায় এবং কিছুদিনের মধ্যে পাতা ও গাছ মারা যায়।

    দমন ব্যবস্থাপনা

    ১. ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। 

    ২. নীরোগ বীজ ব্যবহার করতে হবে। 

    ৩. শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে। 

    ৪. রোগ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে একরোবেট এমজেড (ম্যানকোজেব+ডাইমেথোমরফ্) ০৪গ্রাম/লিটার বা হেডলাইন টিম (পাইরাক্লস্ট্রাবিন+ডাইমেথোমরফ্) ২.৫০গ্রাম/লিটার বা হেমেনকোজেব বা রিডোমিল গোল্ড বা ইন্ডোফিল এম-৪৫ বা ডায়থেন এম-৪৫ প্রভৃতি ০৪গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।

    অথবা

    ডিফেন্স ৩৫এসসি বা কোগার ২৮এসসি বা এমিস্টার টপ নামক ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। ছত্রাকনাশকের মাত্রা হবে প্রতি লিটার পানিতে ০১ মিলি।

    ছত্রাকজনিত ঢলে পড়া রোগ
    চারা অবস্থায় এ রোগ দেখা যায়। কয়েক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। বীজ ও মাটি দ্বারা এ রোগ বিস্তার লাভ করে। টমেটো গাছের গোড়া ও শিকড়ে বাদামি বর্ণের দাগ পড়ে। পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে, গাছ ঢলে পড়ে এবং পরে মারা যায়।

    দমন ব্যবস্থাপনা

    ১. রোগ সহনশীল জাতের চাষ। 

    ২. শস্য পর্যায় অনুসরণ। 

    ৩. রোগ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিফেন্স ৩৫ এসসি নামক ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। ছত্রাকনাশকের মাত্রা হবে প্রতি লিটার পানিতে ০১ মিলি।

    ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট
    মাটিতে বসবাসকারী এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ ছড়ায়। গাছের ক্ষতের মধ্য দিয়ে এ রোগের জীবাণু ঢুকে পড়ে। আক্রান্ত গাছের পাতা ঢলে পড়ে এবং গাছ মারা যায়।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    ১. আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলা। 

    ২.শস্য পর্যায় অনুসরণ। 

    ৩. স্টেপটোমাইসিন বা ব্যাকট্রোবান বা ব্যাকট্রল বা ব্যাকটাফ নামক ব্যাকটেরিয়ানাশক স্প্রে করা। প্রয়োগমাত্রা প্রতি লিটার পানিতে ০৪ গ্রাম।

    মোজাইক রোগ 
    এটি টমেটোর একটি ভাইরাসজনিত রোগ। বীজ ও কীটপতঙ্গের মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। এ রোগের আক্রমণে পাতায় হলুদ ও সবুজ রঙের ছোট ছোট দাগ পড়ে। রোগের আক্রমণে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং ফলন হ্রাস পায়।

    দমন ব্যবস্থাপনা 
    ১) নীরোগ বীজ ব্যবহার। 

    ২) পোকা দমন। আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা। পোকা দমনের জন্য হলুদ আঠালো ফাঁদ ব্যবহার।

    পাতা কোঁকড়ানো রোগ 
    এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এক ধরনের সাদা মাছি দ্বারা এ রোগ ছড়ায়। পাতার ফলক কিনার থেকে মধ্য শিরার দিকে গুটিয়ে বা কুঁকড়িয়ে যায়। পাতা খসখসে হয়ে ওঠে এবং হলুদ হয়ে যায়। গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।

    দমন ব্যবস্থাপনা
    রোগ প্রতিরোধী জাতের চারা লাগানোর পর নোভাস্টার ৫৬ ইসি ২ থেকে ৩ বার প্রতি লিটার পানিতে ০২ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। নীরোগ বীজ ব্যবহার করতে হবে। হলুদ আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে।

    শিকড়ের গিঁট রোগ
    এটি একটি নেমাটোড বা কৃমিজনিত রোগ। এর আক্রমণে টমেটো গাছের শিকড়ে ছোট ছোট গিঁট দেখা যায়। গিঁটগুলো আস্তে আস্তে বড় হয়। আক্রান্ত গাছের বাড়তি কমে যায় এবং শিকড় পচে গাছ মারা যায়।

    দমন ব্যবস্থাপনা 

    শস্য পর্যায় অনুসরণ করা। আক্রান্ত জমিতে একরপ্রতি ১৬ কেজি হারে ফুরাডান ৫জি ব্যবহার করতে হবে। জমিতে জো থাকা অবস্থায় গাছের গোড়া থেকে চার-পাঁচ ইঞ্চি দূরে লাঙলের ভাউর টেনে তাতে ফুরাডান ৫জি প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।


    টমেটো ফল ছিদ্রকারী পোকা



    এই পোকা টমেটোর একটি মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা। এই পোকা টমেটো ছাড়াও মরিচ, মটরশুটি,ছোলা,তুলা, ভুট্টা ইত্যাদি ফসলেরও ক্ষতি করে। ফলছেদক পোকার স্ত্রী মথ হালকা বাদামী রঙের, আকৃতিতে বেশ মোটাসোটা।পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী মথ কচি ফল, ফুল, পাতা বা কান্ডের ভিতর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ডিম ঢুকিয়ে দেয়। এ পোকার জীবন চক্র ২৮-৪২ দিনে শেষ হয় এবং বছরে এ পোকা ৫-৮ বার বংশ বৃদ্ধি করে। 

    ফল ছিদ্রকারী পোকার ক্ষতির লক্ষণ

    এই পোকার কীড়া টমেটো ফলের বিশেষ ক্ষতিসাধন করে থাকে। কীড়া প্রথমে পাতা, ফুল ইত্যাদি খায়। তারপর ফল ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে ফলের শাঁস খাওয়া শুরু করে। এতে ফলের শাঁস নষ্ট হয়, শেষে পচন শুরু হয় এবং বিক্রী ও খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে। কীড়ার প্রবেশ পথে কীড়ার পিছন দিক অনেক সময় ঝুলতে দেখা যায়।


    ফল ছিদ্রকারী পোকার সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা



    ১. পোকার কীড়াসহ আক্রান্ত ফল ক্ষেতের বাইরে এনে ধ্বংস করতে হবে। 



    ২. আক্রমণ প্রবণ ক্ষেতে আগাম টমেটো চাষ থেকে বিরত থাকতে হবে। 

    ৩. সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে । 

    ৪. প্রতি ১ লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম আধাভাঙ্গা নিমবীজ ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে ছেকে টমেটোর ফুল আসার পর থেকে ১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করতে হবে । 


    ৫. আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে মাটিতে পুতে ফেলুন এরপর রিজেন্ট ৫০এসসি (ফিপ্রোনিল) ও হেক্লেম বা এমাকর বা সাসপেন্ড বা  সাহাম ৫এসজি (এমামেকটিন বেনজয়েট) প্রতি লিটার পানিতে ০১মিলি ও ০১ গ্রাম করে মিশিয়ে শেষ বিকেলে স্প্রে করুন;

    ৬. ৩-৪ দিন পর হেক্লেম ৫এসজি ও নোভাস্টার ৫৬ইসি (বাইফ্রেনথ্রিন+এবামেকটিন) বা সায়েটা (এবামেকটিন) ( প্রতি লিটার পানিতে ০১ গ্রাম ও ০২ মিলি) মিশিয়ে স্প্রে করুন;

    ৭. মাঝে মধ্যে মার্শাল ২০ইসি (কার্বোসালফান) বা ট্রেসার ৪৫এসসি (স্পিনোসাড) বা বেল্ট (ফ্লুবেনডিয়ামাইড) দিয়ে স্প্রে করলে পোকার সহনশীলতা গড়ে উঠে না।