Potato Pest Management (আলুর পোকামাকড় ও রোগ বালাই ব্যবস্থাপনা)
আলুর পোকামাকড় ও রোগ বালাই ব্যবস্থাপনা
আলুর কাটুই পোকা (Cutworm)
কাটুই পোকা চারা গাছ কেটে দেয় এবং আলুতে ছিদ্র করে আলো ফসলের ক্ষতি করে থাকে। পোকা দিনের বেলায় মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে। আলুর কাটা গাছ অনেক সময় কাটা গোড়ার পাশেই পড়ে থাকতে দেখা যায়।
আলুর কাটুই পোকা ব্যবস্থাপনা
১। সকাল বেলা কেটে ফেলা চারার আশে পাশে মাটি খুড়ে পোকা বের করে মেরে ফেলা ।
২। কেরোসিন (২-৩ লি./ হেক্টর হারে) মিশ্রিত পানি সেচ দেয়া।
৩। পাখি বসার জন্য ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে দেয়া।
৪। রাতে ক্ষেতে মাঝে মাঝে আবর্জনা জড়ো করে রাখলে তার নিচে কীরা এসে জমা হবে, সকালে সেগুলোকে মেরে ফেলা।
৫। ক্ষেতের মাটি আলগা করে দিয়ে পোকা পাখিদের খাবার সুযোগ করে দেওয়া।
৬. এ পোকা নিশাচর, রাতের বেলা সক্রিয় থাকে- তাই রাতে হারিকেন বা টর্চ দিয়ে খুঁজে খুঁজে পোকা মেরে ফেলা।
৭। ফুরাডান (কার্বোফুরান) ৫জি ০৮কেজি/একর বা অপটিমাস (ক্লোথিয়ানিডিন) ৫জি ১৬কেজি/ একর আলু বীজ রোপণের সময় সারিতে নালার মধ্যে বা সমস্ত জমিতে ছিটিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিন। লক্ষ্য রাখবেন দানা ভেজার জন্য মাটিতে যেন রস থাকে।
৮। ক্লোরপাইরিফস গ্রুপের কীটনাশক যেমন ডারসবান ০৫ মিলি./লি হারে অথবা (ক্লোরপাইরিফস+ সাইপারমেথ্রিন) গ্রুপের কীটনাশক যেমন: সুপারফাস্ট ৫৫ ইসি বা নাইট্রো বা সেতারা ৫৫ ইসি ০২ মি.লি./লি. হারে অথবা ল্যাম্ডা সাইহ্যালোথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক যেমনঃ পদ্মা ল্যামডা ৫ইসি বা ক্যারাটে/ রিভা ২.৫ ইসি ১-১.৫ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকেলে বা সন্ধ্যার পর গাছের গোড়ায় স্প্রে করা।
আলুর জাব পোকা (Aphid)
১. জাব পোকা পূর্ন বয়স্ক ও বাচ্চা উভয়ই অবস্থাতেই আলু গাছের ক্ষতি করতে পারে।
২. জাব পোকা আক্রান্ত গাছের পাতা, কান্ড ও ডগা থেকে রস চুষে খায় এবং বিভিন্ন ভাইরাস জনিত রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে।
৩. মারাত্মকভাবে আক্রান্ত গাছের পাতা কুকড়ে যায় এবং হলুদ বর্ণ ধারন করে অথবা পাতা বিভিন্ন আকৃতি ও বর্ণের হতে পারে।
৪. মেঘলা ও কুয়াশাছন্ন আবহাওয়ায় জাব পোকার বংশ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
অনুকূল পরিবেশঃ ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি হতে এ পোকার সংখ্যা বাড়তে থাকে।
আলুর জাবপোকা ব্যবস্থাপনা
১. আলু ক্ষেতের আশেপাশে সোলানেসী গোত্রভূক্ত ফসল যেমন- টমেটো, বেগুন, মরিচ ইত্যাদি চাষ করা যাবে না এবং সুষম সার ও সময়মত সেচ দিতে হবে।
২. জাব পোকার প্রাকৃতিক শত্রু যেমনঃ লেডিবার্ড বিটল, বোলতা ইত্যাদি সংরক্ষণ করে আক্রমণের ব্যাপকতা কমানো যায়।
৩. পরিপক্ক গাছে অর্থাৎ আলু উত্তোলনের অল্প আগে পোকার আক্রমণ হলে আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলতে হবে।
৪. হেমিডর/ পিমিডর/ কনফিডর ৭০ডব্লিউজি ২গ্রাম/১০লিটার বা ইমিটাফ বা এডমায়ার বা গেইন ০৫মিলি/১০লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ভালভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
আলুর রোগ ব্যবস্থাপনা
আলুর লেইট ব্লাইট/নাবী ধ্বসা (Late blight of potato)
আলুর লেইট ব্লাইট রোগের লক্ষণ
প্রথমে পাতা, ডগা, ও কান্ডে কিছু অংশ ঘিরে ফেলে। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যে জমির অধিকাংশ ফসল আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ভোরের দিকে আক্রান্ত পাতার নিচে সাদা পাউডারের মত ছত্রাক চোখে পড়ে। আক্রান্ত ক্ষেতে পোড়া-পোড়া গন্ধ পাওয়া যায় এবং মনে হয় যেন জমির ফসল পুড়ে গেছে ।
১. আলুর নাবী ধ্বসা রোগের আক্রমণে পাতায় ছোপ ছোপ ভিজা বাদামী অথবা ফ্যাকাশে, গোলাকার বা এলোমেলো দাগ দেখা যায় এবং পরে কালো বর্ণ ধারণ করে।
২. পরবর্তীতে দাগগুলো পাতার কিনারা হতে ভেতরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
৩. পাতার নীচের দিকে সাদা সাদা অসংখ্য পাউডারের মত ছত্রাক দেখা যায়।
৪. মারাত্মকভাবে আক্রান্ত গাছে পুরো পাতা ও কান্ড পঁচে যায় এবং দ্রুত সমস্ত গাছ মারা যায়।
৫. অনুকূল আবহাওয়ায় আলুর নাবী ধ্বসা রোগ খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং আলু ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।
১. রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
২. আক্রান্ত জমিতে সেচ যথা সম্ভব বন্ধ করে দিতে হবে।
৩. রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে একরোবেট এমজেড বা মাইক্রা বা ইউনিলাক্স বা রিডোমিল গোল্ড বা হেমেনকোজেব বা ইন্ডোফিল বা ডায়থেন এম ০৪গ্রাম/ লিটার অথবা হেডলাইন টিম বা জ্যামপ্রো ২.৫গ্রাম/লিটার ইত্যাদি অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ৭-১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
আলুর কাণ্ডপঁচা রোগ
১. এ রোগের আক্রমনে আলু গাছের কান্ড বাদামী রংয়ের দাগ দ্বারা আবৃত হয়ে পড়ে এবং গাছ ঢলে পড়ে ও নীচের পাতা হলুদ হয়ে যায়।
২. মারাত্মকভাবে আক্রান্ত আলু থেকে পানি বের হয় এবং পচন ধরে।
৩. আক্রান্ত গাছের কান্ডে বা আশেপাশের মাটিতে সাদা সাদা ছত্রাকের জালিকা দেখা যায় যা পরবর্তীতে স্কেলেরোশিয়া গঠন করে।
আলুর কান্ডপঁচা দমন পদ্ধতি
১. আক্রান্ত গাছ মাটি সহ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা পুঁতে ফেলতে হবে ।
২. বীজ বপনের পূর্বে জমিতে প্রচুর পরিমাণে পচা জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে এবং আলু বীজ ০২ গ্রাম ম্যানকোজেব ০১ লিটার পানিতে মিশিয়ে শোধন করতে হবে।
৩. আক্রমণ দেখার সাথে সাথে কোগার ২৮এসসি বা কারিশমা বা নাভারা অথবা এমিস্টার টপ ০১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫-৭দিন পরপর ২-৩বার স্প্রে করতে হবে।
ভাই খুব ভালো লাগলো জেনে
ReplyDelete