Header Ads

ad728
  • Breaking News

    Mango Pest and Disease Management (আমের পোকা মাকড় ও রোগ বালাই দমন)


    আমের পোকা মাকড় ও রোগ বালাই দমন 

    পোকা মাকড় এবং রোগ বালাই আমের মারাত্মক শত্রু। সেজন্যে আমের মৌসুমে আমাদের দেশে নানা ধরনের স্প্রে করার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কাজটি ভাল নিঃসন্দেহে,তবে এ ব্যাপারে সঠিক পরামর্শটি জানা আপনার জন্যে খুবই জরুরী। নিচে আমের মারাত্মক কিছু পোকা মাকড় ও রোগের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো। তবে আম গাছে পোকা লাগলেই বা রোগ বালাই দেখামাত্রই বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে এমনটি আর মনে করেননা আজকের দিনের কৃষি বিজ্ঞানীরা। সেজন্যে আজকাল বালাই দমন না বলে বলা হচ্ছে বালাই ব্যবস্থাপনা। আসলে দমন কথাটি খুবই শক্ত কারণ কোন রোগ বা বালাই কে একেবারে দমন বা নির্মূল করা কোনভাবেই সম্ভব নয় এটাকে শুধুমাত্র ম্যানেজ করে এটা দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতিকে একটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় মাত্র। আজকের কৃষি বিজ্ঞানীরা তাই এটাকে বলছেন সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা বা আইপিএম। আইপিএম এর অংশ হিসেবে আম বাগানে যা যা করা যেতে পারে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়া হলো: 



    ১. আমে কোন পোকা বা রোগ দেখা দিলে সেটা প্রাথমিকভাবে সংগ্রহ করে মেরে ফেলা ভাল। 

    ২. আক্রান্ত পাতা বা ডালপালা সংগ্রহ করে সাথে সাথে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। 

    ৩. মাঝে মাঝে বাগানে চাষ বা জমি উলট পালট করে দিলে পোকার কীড়া মারা যায় এবং পাখিতে খেয়ে ফেলে। 

    ৪. নিশাচর পোকার জন্যে আলোর ফাঁদ এবং মাছি পোকার জন্যে বিষটোপ সম্পন্ন ফাঁদ ব্যবহার করা । 

    ৫. জমি বা গাছের আশেপাশে সর্বদাই পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। 

    ৬. জমিতে খড়কুটা বা আবর্জনা আগুন ধরিয়ে দিলে অনেক পোকা মাকড় মারা যায়। 

    ৭. গোবর সার বীজ চারার মাধ্যমেরোগ ও পোকা মাকড় যেন না ছড়ায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। 

    ৮. মোদ্দাকথা কোন বালাইনাশক ব্যবহার না করে পোকা মাকড় ও রোগ বালাই দমন করা উত্তম। কেননা বালাইনাশক ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হয়, মধুমাছি বোলতা ইত্যাদি উপকারী পোকা মারা যায় এবং মাছ ও অনান্য প্রাণীর মৃত্যুর আশংকা থাকে। বালাইনাশক ব্যবহারের পরে যে সব পোকা বেচে থাকে তাদের মধ্যে যে বালাই সহনশীলতা গড়ে ওঠে যেটা পরবর্তীতে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে 

    ৯. আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে তাহলো জমিতে সুষম সার ব্যবহার না করলে গাছে যে কোন ধরনের রোগ ও বালাইয়ের আক্রমণ বেশী হতে পার্ জমিতে সারের অভাব হলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়লেও রোগ পোকা মাকড়ের আক্রমণ বেশী হয়; আবার ইউরিয়া সারের পরিমানে বেশী দিলে গাছের সজীবতা বেশী হয়ে রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যায়। 

    আমের ক্ষতিকর পোকা মাকড় ও তাদের দমন ব্যবস্থাপনাঃ
    Mango Hopper
    শোষক বা হপার পোকাঃ 
    আম গাছের নিচ দিয়ে হেঁটে যাবার সময়ে চটচট শব্দে যে পোকা আমাদের গায়ে পড়ে সেটাই শোষক বা হপার পোকা। এ পোকা আমের মুকুলের রস শুষে খেয়ে ফেলে । এছাড়া এ পোকা আম্র মুকুলের রস খেয়ে,বিষ্ঠা ত্যাগ করে আঠালো ধরনের মধুরস,যার সাথে ফলের পরাগরেণু আটকে গিয়ে পরাগায়ন ব্যহত হয় এবং এ রসের সাথে ছত্রাক জন্মে কালো হয়ে যায়,যাকে বলে “মহালাগা”। এ পোকার রাসায়নিক দমন হিসেবে আমরা বাজারে প্রচলিত নিম্নলিখিত কীটনাশক সমূহ অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে পারি। 

    কীটনাশকের নাম
    মূল উপাদান
    বিষক্রিয়ার ধরণ
    প্রয়োগ মাত্রা
    রিপকর্ড ১০ ইসি
    সাইপারমেথ্রিন
    স্পর্শ ও পাকস্থলী
    ০১ মিলি/লি.পানি
    ডেসিস ২.৫ ইসি
    ডেলটামেথ্রিন
    স্পর্শ ও পাকস্থলী
    ০১ মিলি/লি.পানি
    রেলোথ্রিন ১০ ইসি
    সাইপারমেথ্রিন
    স্পর্শ ও পাকস্থলী
    ০১ মিলি/লি.পানি
    মিপসিন ৭৫ ডব্লিউপি
    মিথাইল আইসোপ্রোকার্ব
    স্পর্শ ও পাকস্থলী
    ১.৫ গ্রাম/লি.পানি
    পদ্মা ল্যাম্বডা ৫ইসি
    ল্যাম্বডা সাইহ্যালোথ্রিন
    স্পর্শ ও পাকস্থলী
    ০.৫ মিলি/লি.পানি
    নোভাস্টার ৫৬ইসি
    বাইফেনথ্রিন+এবামেকটিন
    স্পর্শ ও পাকস্থলী
    ০১ মিলি/লি.পানি


    উপরোক্ত কীটনাশক উল্লেখিত মাত্রায় গাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে কিন্তু ফুল ফোটার আগে একবার এবং এর একমাস পর আরেকবার সমগ্র গাছের পাতা,মুকুল ও ডালপালায় ভিজিয়ে দিতে হবে। 

    ভোমরা বা ফল ছিদ্রকারী পোকাঃ
    এ পোকা আমের গায়ে ছিদ্র করে আমের মধ্যে প্রবেশ করে আমের শাঁস খেয়ে থাকে। এ পোকার আক্রমণ শুরু হয় আম মটর দানার মত হলে। কচি আম ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ফলে আমের গায়ের সে ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। এজন্যে বাইরে থেকে এ আম চেনা বড্ড কঠিন। একবার এ ধরনের পোকার আক্রমণ হলে প্রতি বছর সেটা হতে থাকে এবং আশপাশের গাছেও এ পোকা ছড়িয়ে পড়ে। 

    ব্যবস্থাপনা হিসেবে প্রতি লিটার পানিতে সুমিথিয়ন ৫০ইসি কীটনাশক ২ মিলিঃ বা রিজেন্ট ৫০এসসি ০১মিলি বা এমামেকটিন বেনজয়েট ০১গ্রাম হারে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। প্রথম স্প্রে করতে হবে আম মটর দানা বাঁধার পরে। 

    Fruit fly
    মাছি পোকাঃ 
    আম পাকার সময়ে এ পোকা আমের গায়ে ডিম পাড়ে, অতঃপর ডিম ফুটে অসংখ্য কীড়া আমের শাঁস খেয়ে ফেলে; পাকা আম কাটলে এ পোকার কীড়া দেখা যায়। আম পাকার একমাস আগে এ পোকা দমনের জন্যে ১৫ দিন পরপর দুইবার স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়, এরজন্যে সারণী-১ এ উল্লেখিত ডেসিস ২.৫ ইসি বা পদ্মা ল্যাম্বডা ৫ইসি  স্প্রে করা যেতে পারে। 

    এ্যাপসিলা পোকাঃ 
    মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা। পোকার আক্রমণে গাছের বৃদ্ধি ও আমের উৎপাদন কমে যায় । কচি পাতার ভিতর থাকা প্রথম ধাপের নিম্ফ পাতার ভিতর থেকে রস চুষে খায় এবং এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে যার কারণে পত্রকক্ষে সুচালো মুখবিশিষ্ট সবুজ রংয়ের মোচাকৃতি গলের সৃষ্টি হয়। গল সৃষ্টি হওয়ার কারণে পত্রকক্ষে আর কোন নতুন পাতা বা মুকুল বের হতে পারে না। গাছে বেশী পরিমানে গল সৃষ্টি হলে গলযুক্ত ডগা শুকিয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। 



    দমন ব্যবস্থাপনা 
    আক্রান্ত ডগা কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রমণ বেশী হলে আগষ্ট মাসে ১৫ দিন পর পর ২ বার প্রবহমান কীটনাশক বা সুমিথিয়ন/সেভিন/রিপকর্ড স্প্রে করতে হবে। 

    আমের ক্ষতিকর রোগ ও দমন ব্যবস্থাপনাঃ


    Anthracnose
    আমের এ্যানথ্রাকনোজ রোগঃ 
    এ রোগের আক্রমণে আমের পাতা কাণ্ড,মুকুল ও ফলে ধূসর বাদামী রংয়ের দাগ পড়ে। মুকুল ঝরে পড়ে, আমে কালচে দাগ হয় এবং আম পচে যায়। 

    দেখুন ভিডিওতে


    প্রতিকারঃ
    ১. আমের মৌসুম শেষে মরা ডালপালা কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। গাছের নিচের মরা পাতা পুড়িয়ে দিতে হবে। 

    ২. গাছে মুকুল আসার পরে এবং ফুল ফোটার আগে টিল্ট-২৫০ ইসি ০.৫ মিলি/লিটার বা ডিফেন্স ৩৫এসসি বা কোগার ২৮ এসসি ০১মিলি/লিটার   অথবা ডায়থেন এম-৪৫, হেমেনকোজেব বা ইন্ডোফিল বা একরোবেট এমজেড ০২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আমের আকার মটর দানার মত হলে আরেকবার স্প্রে করতে হবে। 


    Powdery Mildew
    পাউডারী মিলডিউ রোগঃ 
    ছত্রাক জনিত এ রোগে আমের মুকুল সাদা পাউডারের মত হয়ে পড়ে, মুকুল ঝরে পড়ে, আমের চামড়া খসখসে হয় এবং আম কুচকে যায়। আমের এ্যানথ্রাকনোজ রোগের ক্ষেত্রে যে ধরনের ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে সেটা অনুসরণ করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। 

    আমের বিকৃতিঃ 
    Malformation
    রোগটি ভারতে বড় সমস্যা হলেও এদেশে তেমন বড় সমস্যা নয় তবে ক্ষিরসাপাত, আম্রপালী এবং লতা বোম্বাইতে এ রোগের কিছটা আক্রমণ দেখা যায়। এ ধরনের বিকৃতি দুই প্রকার (১) দৈহিক বিকৃতি (২) মুকুলের বিকৃতি একদল বিজ্ঞানীর মতে এটি শারীরবৃৃত্তীয় রোগ আবার অন্যদলের মতেঃ এটি ভাইরাস বা মাকড়জনিত রোগ সর্বশেষ দলের বিজ্ঞানীর মতেঃ এটি ছত্রাকজনিত রোগ বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানী এ ছত্রাক দ্বারা রোগ সৃষ্টির ক্ষমতা প্রমান করেছেন। 


    ব্যবস্থাপনাঃ 
    আক্রান্ত চারা গাছ ও মুকুল কেটে ফেলতে হবে। কলম তৈরীতে সুস্থ রুট ষ্টক ও সুস্থ সায়ন ব্যবহার করতে হবে। ১০-১৫ সে.মি মুকুলে কার্বেন্ডাজিম স্প্রে করতে হবে। গাছে মুকুল আসার আগে প্লানোফিক্স (০.২গ্রাম/লিঃ) স্প্রে করলে মুকুলের বিকৃতির হার কমে যায় সেইসাথে আমের মুকুল বেশী আসে এবং বেশী ফলন পাওয়া যেতে পারে। সুতরাং প্লানোফিক্স ব্যবহারের দ্বিবিধ উপকারিতা রয়েছে।


    বোঁটা পচা

    আম গাছ থেকে পাড়ার পর পাকতে শুরু করলে বোঁটা পচা রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রথমে বোঁটায় বাদামি অথবা কালো দাগ দেখা দেয়। দাগ দ্রুত বাড়তে থাকে এবং গোলাকার হয়ে বোঁটার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। জীবাণু ফলের ভেতরে আক্রমণ করে পচিয়ে ফেলে। আক্রান্ত আম ২/৩ দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। রোগের জীবাণু বোঁটা ছাড়াও অন্যান্য আঘাতপ্রাপ্ত স্থান দিয়ে আমের ভেতরে প্রবেশ করে আম পচিয়ে ফেলতে দেখা যায়।



    প্রতিকার
    রোদ্রোজ্জ্বল দিনে গাছ থেকে আম পাড়তে হবে। আম পাড়ার সময় যাতে আঘাত না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ৫ সেমি. (২ ইঞ্চি) বোঁটাসহ আম পাড়লে এ রোগের আক্রমণ কমে যায়। আম পাড়ার পর গাছের তলায় জমা না রেখে দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। আম পাড়ার পর পরই গরম পানিতে (৫৫০ সে. তাপমাত্রার পানিতে ৫-৭ মিনিট) অথবা কার্বেন্ডাজিম দ্রবণে (প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম) ৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখার পর গুদামজাত করলে বোঁটা পচা রোগের আক্রমণ অনেকাংশে কমে যায়।


    আমের ঝুল বা শুটি মোল্ড রোগ


    Sooty mould

    রোগের লক্ষনঃ 
     আম গাছে মিলিবাগ বা হপার পোকা আক্রমন করলে এরা পাতায় ও আগায় এক প্রকার মিষ্ট রস Honey dew)নিঃসরণ করে। এই মিষ্ট রসে সুটি মোল্ড রোগের ছত্রাক জন্মে এবং দ্রুত বংশ বিস্তার করে পাতার উপরিভাগ ছেয়ে ফেলে। ছত্রাক কালো স্পোর উৎপন্ন করে এবং পাতার উপর মিষ্ট রসের সংগে লেগে থাকায় পাতার উপরিভাগ কালো দেখায়। সবুজ পাতা কালো আস্তরণে ঢাকা থাকে বিধায় সালোক সংশ্লেষনের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন ব্যহত হয়, ফলে গাছ দুর্বল হয় ও ফলন কমে যায়। পরিপুষ্ট ফলের গায়েও কালো আবরণ দেখা যায়। বিশেষ করে আশ্বিনা জাতের আমে এ ধরনের আবরন খুব বেশী হয় এবং এতে আমের দাম অনেক কমে যায়।

    প্রতিকার 

    ১) আমের বাগান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, আগাছা মুক্ত ও খোলামেলা অবস্থায় রাখতে হবে।

    ২) গাছে হপার পোকার আক্রমন থাকলে রিপকর্ড প্রতি লিটার পানিতে ১.০ মিঃলিঃ হারে মিশিয়ে গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার পূর্বে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালভাবে ভিজিয়ে একবার স্প্রে করতে হবে। আবার আম গুটি বা মার্বেল আকার ধারণ করলে উপরোক্ত ঔষধ আরও একবার স্প্রে করতে হবে।

    ৩) ছত্রাক দমনের জন্য গাছে মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার পূর্বে থিওভিট বা কুমুলাস বা হেসালফ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালভাবে ভিজিয়ে একবার স্প্রে করতে হবে। আবার আম গুটি বা মার্বেল আকার ধারণ করলে উপরোক্ত ঔষধ আরও একবার স্প্রে করতে হবে।

    ৪) ফলের উপরের রোগ দমনের জন্য ফল ব্লিচিং দ্রবন (১০০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার + ১০০ গ্রাম বরিক এসিড + ৪.৫ লিটার পানি)-এ ২ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। তারপর পরিস্কার পানিতে ধুয়ে খোলা বাতাসে শুকাতে হবে।

    No comments