Header Ads

ad728
  • Breaking News

    Rice Pest and Disease Management (ধানের পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই দমন)


    ধানের পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই দমন



    ধানের প্রধান প্রধান পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই দমন ব্যবস্থা নিম্নরুপঃ 


    ধানের পোকা-মাকড় দমন ব্যবস্থা 

    Rice Stem Borer

    ধানের মাজরা পোকা 

    বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরণের মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা যায়। 

    ১. হলুদ মাজরা পোকা 

    ২. কালো মাথা মাজরা পোকা 

    ৩. গোলাপী মাজরা পোকা 

    মাজরা পোকাগুলোর কীড়ার রঙ অনুযায়ী তাদের নাম দেওয়া হয়েছে। এদের আকৃতি ও জীবন বৃত্তান্তে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও এদের ক্ষতির ধরণ ও দমন পদ্ধতি একই। জমির কিছু কিছু স্থানে ধান গাছের শিষ বা ডগা মরা দেখা গেলে বুঝতে হবে ধানে মাজরা পোকার আক্রমণ ঘটেছে। যে পাতায় মাজরা পোকা বা পোকার ডিম দেখা যাবে সেই শিষ বা ডাল পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন ফাঁদ বা কীটনাশক ব্যবহার করে এসকল পোকা দমন করা যায়। এসব পোকার মধ্যে হলুদ মাজরা পোকা প্রধাণত বেশি আক্রমণ করে বলে এই পোকার বিবরণ দেওয়া হল: 

    হলুদ মাজরা পোকার ক্ষতি বা লক্ষণসমূহ 

    ১। হলুদ মাজরা পোকা পাতার উপরে ও নীচে ডিম পাড়ে ও ডিমের গাদার উপর হালকা ধূসর রংয়ের আবরণ পড়ে। 

    ২। ডিম ফুটে কীড়া বের হয়ে আস্তে আস্তে কান্ডের ভিতর প্রবেশ করে ভিতরের নরম অংশ কুড়ে কুড়ে খায়। 

    ৩। শীষ আসার আগ পর্যন্ত এ ধরনের ক্ষতি হলে মরাডিগ দেখা যায় এবং ডিগ টান দিলে সহজেই উঠে আসে। একে ‘মরা ডিগ’ বা ‘ডেডহার্ট ’ বলে। 

    ৪। শীষ আসার পর মাজরা পোকা ক্ষতি করলে সম্পূর্ণ শীষ শুকিয়ে যায়। একে সাদাশীষ বা মরা শীষ বা হোয়াইট হেড বলে। 

    ৫। বোরো, আউস ও আমন ধাণে এই পোকার আক্রমণ বেশি দেখা যায়। 

    মাজরা পোকার দমন পদ্ধতি 

    দেখুন ভিডিওতে


    ১। মাজরা পোকার ডিমের গাদা সংগ্রহ করে নষ্ট করতে হবে। 

    ২। ক্ষেতে ডালপালা পুতেঁ দিয়ে পোকা খেকো পাখির সাহায্যে পোকার সংখ্যা কমাতে হবে। একে পার্চিং বলে। 

    ৩। আলোক ফাদের সাহায্যে পোকা দমন করতে হবে। 

    ৪। জমিতে শতকরা ১০-১৫ ভাগ মরা ডিগ অথবা শরকরা ৫ ভাগ মাদা শীষ দেখা গেলে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। 

    ৫। ধানের চারা লাগানোর ১৫-২০ দিন পর একরে ০৪ কেজি ফুরাডান ৫জি (কার্বোফুরান) বা ০৬ কেজি অপটিমাস ৫জি (ক্লোথিয়ানিডিন) বা ০৪ কেজি ফারটেরা ৪জি (ক্লোরানট্রানিলিপ্রোল) ০৫ কেজি ইউরিয়া সারের সাথে মিশিয়ে সমস্ত জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। 

    ৬। চারা রোপনের ৪০-৪৫ দিন পর রিজেন্ট (ফিপ্রোনিল) ৫০এসসি ১.৫ মিলি অথবা বেল্ট (ফ্লুবেনডায়ামাইড) ০.৪গ্রাম বা কোরাজেন ১৮এসসি (ক্লোরানট্রানিলিপ্রোল) ০.৩মিলি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে । 

    ৭। ১৫-২০ দিন পর দ্বিতীয় স্প্রে করতে হবে । 


    Brown Plant Hopper

    কারেন্ট পোকা (বাদামী গাছ ফড়িং), পামরি পোকা, চুঙ্গি পোকা, সবুজ পাতা ফড়িং 

    বাচ্চা ও পূর্ন বয়স্ক পোকা একসঙ্গে ধান গাছের গোড়ায় বসে রস চুষে খায়। ফলে ধান গাছ দ্রুত শুকিয়ে খড়ের মত হয়ে যায়। অল্প আক্রান্ত ক্ষেত বাজ পোড়ার মত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ন ধান ক্ষেত নষ্ট হয়ে যায়। এটি ধান গাছের মারাত্মক ক্ষতিকর পোকা। ধানের চারা অবস্থা থেকে শুরু করে ধান পাকার পূর্ব পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে এপোকার আক্রমণ হতে পারে। বাদামী গাছফড়িং গ্রাসি স্টান্ট, র‌্যাগেট স্টান্ট ও উইল্টেড স্টান্ট নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায়। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও এ সমস্ত রোগ দেখা যায়নি। 

    দমন ব্যবস্থা 

    দেখুন ভিডিওতে

    ১। নিয়মিতভাবে গাছের গোঁড়া পর্যবেক্ষন। 

    ২। জমিতে এ পোকার সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে জমে থাকা পানি সরিয়ে জমি কয়েকদিন শুকিয়ে নিন। 

    ৩। উপদ্রুত এলাকায় ধানের চারা ঘন করে না লাগিয়ে ২০ x ২৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে লাগান। 

    ৪। পরিমিত মাত্রায় সার ব্যবহার করুন। উর্বর জমিতে ইউরিয়া সারের উপরি-প্রয়োগ কমিয়ে দিন। 

    ৫। জমিতে গড়ে প্রতি কুশিতে ১.৫ টি বাচ্চা ও পূর্ণবয়স্ক গর্ভবতী পোকা থাকলে কীটনাশক ব্যবহার করুন। কীটনাশক অবশ্যই গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে। 

    ৬। মিপসিন ৭৫ডব্লিউপি (মিথাইল আইসোপ্রোকার্ব) ২.৭গ্রাম/লিটার বা প্লেনাম, পাইটাফ (পাইমেট্রজিন) ০১গ্রাম/লিটার বা স্প্লেন্ডর (নিটেনপাইরাম+পাইমেট্রজিন) ০.৫গ্রাম/লিটার বা স্টারগেট ৪৮এসসি (ক্লোথিয়ানিডিন) ০.৫মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি গোছায় ২-৩ টি বাদামী গাছ ফড়িং দেখা দিলে স্প্রে করুন। আক্রমনের পূর্বে ১৬ লিটার পানিতে ০২গ্রাম হেমিডর/পিমিডর/কনফিডর ৭০ডব্লিউজি (ইমিডাক্লোপ্রিড) মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ভালভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করুন ১৫-২০ দিন নিরাপদ থাকুন। আক্রমনের তীব্রতানুযায়ী ৭-১৪ দিন পর পর একই নিয়মে স্প্রে করুন। 


    Leaf roller

    পাতা মোড়ানো পোকা 

    এরা পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পাতায় সাদা লম্বা দাগ দেখা যায়। খুব বেশি ক্ষতি করলে পাতাগুলো পুড়ে পাওযার মত দেখায়। ক্ষতিগ্রস্থ পাতার কিনার দিয়ে বিশেষ করে পাতার লালচে রেখা রোগ শুরু হতে পারে। 

    পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী পোকা পাতার মধ্য শিরার কাছে ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো পাতার সবুজ অংশ খায় এবং বড় হবার সাথে সাথে তারা পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে একটা নলের মত করে ফেলে। মোড়ানো পাতার মধ্যেই কীড়াগুলো পুত্তলীতে পরিণত হয়। 

    পাতা মোড়ানো দমন ব্যবস্থাপনা 

    ১। আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক মথ ধরে মেরে ফেলা। 

    ২। জমিতে ডালপালা পুঁতে পোকাখেকো পাখির সাহায্যে পূর্ণ বয়স্ক মথ দমন করা। 

    ৩। শতকরা ২৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা। 

    ৪। মিপসিন/সপসিন ৭৫ডব্লিউপি (মিথাইল আইসোপ্রোকার্ব) ২.৭গ্রাম/লিটার বা স্টারগেট ৪৮এসসি (ক্লোথিয়ানিডিন) ০.৫মিলি/লিটার বা রিজেন্ট (ফিপ্রোনিল) ৫০এসসি ১.৫০মিলি/লিটার বা প্লেনাম, পাইটাফ (পাইমেট্রজিন) ০১গ্রাম/লিটার বা স্প্লেন্ডর (নিটেনপাইরাম+পাইমেট্রজিন) ০.৫গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন। আক্রমনের তীব্রতানুযায়ী ৭-১৪ দিন পর পর একই নিয়মে স্প্রে করুন। 


    ধানের রোগ-বালাই 

    Rice Blast

    ব্লাস্ট রোগ (Blast) 

    ধান গাছের ৩টি অংশে রোগটি আক্রমণ করে থাকে। গাছের আক্রান্ত অংশের ওপর ভিত্তি করে এ রোগ তিনটি নামে পরিচিত যেমন- ১. পাতা ব্লাস্ট, ২. গিট ব্লাস্ট এবং ৩. নেক/শীষ ব্লাস্ট। 

    ব্লাস্ট রোগের কারণ 
    পাইরিকুলারিয়া গ্রিসিয়া (Pyricularia grisea) নামক ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে। 

    এ রোগটি আমন ও বোরো উভয় মৌসুমেই হতে পারে। ধানের চারা অবস্থা থেকে ধান পাকার আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় এ রোগটি হতে পারে। বীজ, বাতাস, কীটপতঙ্গ ও আবহাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। রাতে ঠাণ্ডা, দিনে গরম ও সকালে পাতলা শিশির জমা হলে এ রোগ দ্রুত ছড়ায়। হালকা মাটি বা বেলেমাটি যার পানি ধারণক্ষমতা কম সেখানে রোগ বেশি হতে দেখা যায়। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সার এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম পটাশ সার দিলে এ রোগের আক্রমণ বেশি হয়। দীর্ঘদিন জমি শুকনা অবস্থায় থাকলেও এ রোগের আক্রমণ হতে পারে। 

    ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ 


    Leaf Blast
    পাতা ব্লাস্ট 

    পাতায় প্রথমে ডিম্বাকৃতির ছোট ছোট ধূসর বা সাদা বর্ণের দাগ দেখা যায়। দাগগুলোর চারদিক গাঢ় বাদামি বর্ণের হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এ দাগ ধীরে ধীরে বড় হয়ে চোখের আকৃতি ধারণ করে। অনেক দাগ একত্রে মিশে পুরো পাতাটাই মেরে ফেলতে পারে। এ রোগে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলে জমিতে মাঝে মাঝে পুড়ে যাওয়ার মতো মনে হয়। অনেক ক্ষেত্রে খোল ও পাতার সংযোগস্থলে কাল দাগের সৃষ্টি হয়। যা পরবর্তীতে পচে যায় এবং পাতা ভেঙে পড়ে ফলন বিনষ্ট হয়। 

    Node Blast

    গিঁট বা নোড ব্লাস্ট 

    ধান গাছের থোড় বের হওয়ার পর থেকে এ রোগ দেখা যায়। গিঁটে কালো রঙের দাগ সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে এ দাগ বেড়ে গিঁট পচে যায়, ফলে ধান গাছ গিঁট বরাবর ভেঙে পড়ে। 


    Neck Blast
    নেক বা শীষ ব্লাস্ট 

    এ রোগ হলে শীষের গোড়া অথবা শীষের শাখা প্রশাখার গোড়ায় কাল দাগ হয়ে পচে যায়। শীষ অথবা শীষের শাখা প্রশাখা ভেঙে পড়ে। ধান চিটা হয়। 

    ব্লাস্ট রোগের প্রতিকার 

    দেখুন ভিডিওতে

    ১। রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে। 

    ২। মাটিতে জৈব সারসহ সুষম মাত্রায় সব ধরনের সার ব্যবহার করতে হবে। 

    ৩। আক্রান্ত জমির খড়কুটা পুড়িয়ে ফেলতে হবে এবং ছাই জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। 

    ৪। সুস্থ গাছ হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে, দাগি বা অপুষ্ট বীজ বেছে ফেলে দিয়ে সুস্থ বীজ ব্যবহার করতে হবে। 

    ৫। রোগের আক্রমণ হলে জমিতে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। জমিতে সব সময় পানি রাখতে হবে। 

    ৬। রোগের শুরুতে হেক্টরপ্রতি ৪০ কেজি (বিঘাপ্রতি ৫ কেজি পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। 

    ৭। ট্রাইসাইক্লাজল (সামার / ট্রুপার ৭৫ডব্লিউপি) @ ০.৮০গ্রাম/ লিটার অথবা ট্রাইসাইক্লাজল + প্রোপিকোনাজল (ফিলিয়া ৫২৫ইসি) @ ০২মিঃলিঃ/ লিটার অথবা থায়োপেনেট মিথাইল (টপসিন এম ৭০ডব্লিউপি) @ ০২গ্রাম/ লিটার/অথবা টেবুকোনাজল + ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন (নাটিভো) @ ০.৫০গ্রাম/ লিটার, অথবা পাইরাক্লস্ট্রবিন + ডাইমেথোমরফ (হেডলাইন টিম) @ ২.৫০গ্রাম/লিটার অথবা পাইরাক্লস্ট্রবিন (সেলটিমা ১০ইসি) ০২মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে চারা রোপণের ৫০ দিন পর হতে ১২-১৪ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করা। 

    উপরের যেকোন একটি ছত্রাকনাশকের সাথে অবশ্যই কার্বেন্ডাজিম (ডিফেন্স বা নোইন বা অটোস্টিন) মিশিয়ে নিতে হবে। 


    Sheath rot

    খোল পঁচা রোগ (Sheath rot) 

    রোগের কারণঃ স্যারোক্লেডিয়াম ওরাইজি (Sarocladium oryzae) নামক ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে। 

    রোগের বিস্তারঃ এটা বীজবাহিত। রোগাক্রান্ত নাড়া ও বিকল্প পোষকে অবস্থান করে। মাজরা পোকা ও টুংরো রোগ আক্রান্ত গাছে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। গরম ও সেঁতসেঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ বৃদ্ধি পায়। বৃষ্টির ঝাপটায় এ রোগ ছড়ায়। খোলপঁচা রোগটি সব মৌসুমেই দেখা যায়। সাধারণত গাছের থোর অবস্থা এ রোগটির উপযোগী সময়। 

    খোল পঁচা রোগের লক্ষণ 

    রোগটি কোনো অবস্থাতেই পাতায় হয় না। খোলপঁচা রোগটি যে কোনো খোলে হতে পারে তবে শুধুমাত্র ডিগ পাতার খোল আক্রান্ত হলেই ক্ষতি হয়ে থাকে। ধানে থোড় আসার সময় এ রোগের আক্রমণ দেখা যায়। প্রথমে শেষ পাতার খোলের ওপর গোলাকার বা অনিয়মিত লম্বা দাগ হয়। দাগের কেন্দ্র ধূসর ও কিনারা বাদামি রঙ বা ধূসর বাদামি হয়। দাগগুলো একত্রে বড় হয়ে সম্পূর্ণ খোলেই ছড়াতে পারে। থোড়ের মুখ বা শীষ পঁচে যায় এবং গুঁড়া ছত্রাংশ খোলের ভেতর প্রচুর দেখা যায়। রোগের আক্রমণ বেশি হলে অনেক সময় শীষ আংশিক বের হয় বা মোটেই বের হতে পারে না এবং ধান কালো ও চিটে হয়ে যায়। 

    খোল পঁচা রোগের প্রতিকার 

    ১। সুস্থ বীজ ব্যবহার করতে হবে। 

    ২। কার্বেন্ডাজিম (ডিফেন্স/অটোস্টিন/নোইন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম (প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি কেজি বীজে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে শোধন করতে হবে। 

    ৩। জমির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। 

    ৪। সুষম সার ব্যবহার ও ইউরিয়া সার কম প্রয়োগ করতে হবে। পটাশ সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। 

    ৫। খোল পঁচা দেখা দিলে জমির পানি শুকিয়ে কিছুদিন পর আবার সেচের পানি দিতে হবে। 

    ৬। চারা রোপনের ৩০-৪০ দিন পর এবং ১০-১৫ দিন পরপর ২ বার (অবস্থাভেদে) কোগার/নাভারা/কারিশমা ২৮এসসি (এজক্সিস্ট্রবিন+সিপ্রোকোনাজল) অথবা ডিফেন্স ৩৫এসসি (কার্বেন্ডাজিম+হেক্সাকোনাজল) বা হেকোনাজল/কনটাফ/ওরোজল ৫ইসি (হেক্সাকোনাজল) অথবা এমিস্টার টপ (এজক্সিস্ট্রবিন+ডাইফেনোকোনাজল) বা ফলিকুর (টেবুকোনাজল) বা প্রোপিকোনাজল (টিল্ট ২৫০ ইসি) ০১ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে । তবে আক্রমনের ব্যাপকতা থাকলে ৫-৭ দিন পরপর ৩ বার স্প্রে করা যেতে পারে । 

    Sheath Blight

    খোলপোড়া রোগ (Sheath blight) 

    রোগের কারণঃ রাইজোকটোনিয়া সোলানি (Rhizoctonia solani) নামক ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে। 

    খোলপোড়া রোগের বিস্তার 

    আউশ ও আমন মৌসুমে এ রোগটি বেশি হয়। মাটি ও পরিত্যক্ত খড়কুটায় ছত্রাক থাকে। বেশি তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় এ রোগের প্রকোপ বেশি হয়। অতিরিক্ত পরিমাণে ইউরিয়া সারের ব্যবহার করলে এবং ঘন ঘন বৃষ্টিপাত ও জমিতে পানি জমে থাকলে ও এ রোগের আক্রমণ বাড়ে। 

    খোলপোড়া রোগের লক্ষণ 

    এ রোগে প্রাথমিক অবস্থায় পানির উপরিভাগে খোলের উপর পানি ভেজা হালকা সবুজ রঙের দাগ পড়ে। ডিম্বাকৃতি বা বর্তুলাকার এ সব দাগ প্রায় ১ সেন্টিমিটার লম্বা হয় এবং বড় হয়ে দাগগুলো ২-৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে। কয়েকটি দাগ পরে একত্রে মিশে যায়। প্রত্যেকটি দাগের সীমারেখা এবং রঙের বৈচিত্র্য একটা আক্রান্ত এলাকার বৈশিষ্ট্যকে ফুটিয়ে তোলে। তখন আক্রান্ত খোলটার উপর ছোপ ছোপ দাগ মনে হয়। অনুকুল এবং আর্দ্র পরিবেশে আক্রান্ত কান্ডের নিকটবর্তী পাতাগুলোও আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণতঃ ফুল হওয়া থেকে ধান পাকা পর্যন্ত রোগের লক্ষণ স্পষ্ট দেখা যায়। আক্রান্ত জমি মাঝে মাঝে পুড়ে বসে যাওয়ার মত মনে হয় । রোগের প্রকোপ বেশি হলে ধান চিটা হয়ে যায়। 

    খোলপোড়া রোগের সমন্বিত দমন ব্যবস্থা 

    দেখুন ভিডিওতে

    ১) রোগ সহনশীল জাত যেমন বিআর১০, বিআর২২, বিআর২৩, ব্রিধান৩১ ও ব্রিধান ৩২ চাষ করা যেতে পারে। 

    ২) পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চাষ করা। 

    ৩) লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে শুকিয়ে নিয়ে নাড়া জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা। 

    ৪) সুষমভাবে ইউরিয়া, টিএসপি এবং পটাশ সার ব্যবহার করা। 

    ৫) অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার না করা। 

    ৬) ধানের জাত অনুসারে সঠিক দুরত্বে চারা রোপণ করা (তবে ২৫*২০ সেন্টিমিটার দূরত্বই ভাল)। 

    ৭) রোগ দেখার পর ১৫ দিন অন্তর বিঘা প্রতি ৫ কেজি পটাশ দুই কিস্তিতে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। 

    ৮) রোগ দেখা দিলে পর্যায়ক্রমে পানি দেয়া ও শুকানো। 

    ৯। চারা রোপনের ৩০-৪০ দিন পর এবং ১০-১২ দিন পরপর ২ বার (অবস্থাভেদে) কোগার/নাভারা/কারিশমা ২৮এসসি (এজক্সিস্ট্রবিন+সিপ্রোকোনাজল) অথবা ডিফেন্স ৩৫এসসি (কার্বেন্ডাজিম+হেক্সাকোনাজল) বা হেকোনাজল/কনটাফ/ওরোজল ৫ইসি (হেক্সাকোনাজল) অথবা এমিস্টার টপ (এজক্সিস্ট্রবিন+ডাইফেনোকোনাজল) বা ফলিকুর (টেবুকোনাজল) বা প্রোপিকোনাজল (টিল্ট ২৫০ ইসি) ০১ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে । তবে আক্রমনের ব্যাপকতা থাকলে ৫-৭ দিন পরপর ৩ বার স্প্রে করা যেতে পারে । 

    গোড়া পঁচা ও বাকানি রোগ (Foot rot and Bakanae) 

    রোগের কারণ: ফিউজারিয়াম মোনিলিফরমি (Fusarium moniliforme) নামক ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে। এ ছত্রাক জিবেরিলিন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ করে যা গাছের দ্রুত অঙ্গজ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বাকানি আক্রমণের ফলে ফসলে শতকরা ৩০ ভাগ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। 

    গোড়া পঁচা ও বাকানি রোগের বিস্তার 

    ১। বীজ বাকানি রোগের অন্যতম বাহক। মাটি, পানি, বাতাসের মাধ্যমেও এ রোগের জীবাণু এক জমি হতে অন্য জমিতে ছড়ায়। মাটিতে আগে থেকেই এ রোগের জীবাণু থাকলে ধান গাছে এ রোগ হয়। অতিরিক্ত ইউরিয়া সারের প্রয়োগে এ রোগের আক্রমণ বাড়তে থাকে। উচ্চ তাপমাত্রায়ও (৩০-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এ রোগের আক্রমণ বেশি হয়। 

    গোড়া পঁচা ও বাকানি রোগের লক্ষণ 

    বাকানি রোগ ধান গাছের চারা অবস্থা থেকে শুরু করে থোড় আসা পর্যন্ত যে কোনো সময়ে হতে পারে। তবে চারা অবস্থায় হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে থাকে। আক্রাস্ত ধানের চারা সাধারণ চারার চেয়ে দ্বিগুণ লম্বা হয়ে ফ্যাকাসে হয়ে যায়। আক্রান্ত চারার পাতা হালকা সবুজ রঙের ও দুর্বল মনে হয়। আক্রান্ত কুশি চিকন ও লিকলিকে হয়ে যায়। কোনো কোনো সময় গাছের গোড়ার দিকে গিঁট হতে শিকড় বের হতে দেখা যায়। গাছের গোড়া পচে যায় এবং ধীরে ধীরে আক্রান্ত গাছ শুকিয়ে মরে যায়। চারা অবস্থায় বা রোপণের পরপরই এ রোগে আক্রান্ত হলে আক্রান্ত গাছে কোনো ফলন হয় না। তবে গর্ভাবস্থায় এ রোগ হলে চিটা এবং অপুষ্ট ধান বেশি হয় এবং শীষ অনেক ছোট হয়। 

    গোড়া পঁচা ও বাকানি রোগের প্রতিকার 

    ১। রোগ সহনশীল ধানের জাত চাষ করতে হবে। সুস্থ বীজের ব্যবহার করতে হবে। খড়কুটা জমিতে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। বীজতলা হতে চারা তোলার সময় রোগাক্রান্ত চারা বেছে ফেলে দিতে হবে। আক্রান্ত গাছটি ফুল আসার আগেই তুলে ফেলতে হবে। চারা রোপণের পর এ রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে নষ্ট করে দিতে হবে। সুষম মাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করেও এ রোগের প্রকোপ কমানো যেতে পারে। গোড়া পচা রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে জমির পানি শুকিয়ে ফেলতে হবে। 

    ২। কার্বেনডাজিম (অটোস্টিন, নোইন, ডিফেন্স) বা প্রোভ্যাক্স নামক ছত্রাকনাশক এক লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে শোধন করতে হবে। 

    ৩। কোগার/নাভারা/কারিশমা ২৮এসসি (এজক্সিস্ট্রবিন+সিপ্রোকোনাজল) অথবা ডিফেন্স ৩৫এসসি (কার্বেন্ডাজিম+হেক্সাকোনাজল) বা হেকোনাজল/কনটাফ/ওরোজল ৫ইসি (হেক্সাকোনাজল) অথবা এমিস্টার টপ (এজক্সিস্ট্রবিন+ডাইফেনোকোনাজল) বা ফলিকুর (টেবুকোনাজল) বা প্রোপিকোনাজল (টিল্ট ২৫০ ইসি) ০১ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে । তবে আক্রমনের ব্যাপকতা থাকলে ৫-৭ দিন পরপর ৩ বার স্প্রে করা যেতে পারে । 

    False Smut
    লক্ষীর গু (False Smut) 

    রোগের কারণঃ উস্টিলাজিনোইডিয়া ভাইরেন্স (Ustilaginoidea virens) নামক ছত্রাক দ্বারা হয়ে থাকে। 

    রোগের বিস্তার: ধানের দুধ অবস্থার পর থেকে ধান পাকার আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় এ রোগটি দেখা যায়। ধানের ফুল আসার সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত এবং জমিতে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সারের ব্যবহার করলে রোগের প্রকোপ বেশি হয়। 

    রোগের লক্ষণ: ধানের ছড়ার কিছু ধানে বড় গুটিকা দেখা যায়। গুটিকার ভেতরের অংশ হলদে-কমলা রঙ ও বহিরাবরণ সবুজ রঙের হয়। বহিরাবরণ পরবর্তীতে আস্তে আস্তে কালো হয়ে যায়। কচি গুটিকাগুলো ১ সেমি. এবং পরিপক্ব অবস্থায় আরও বড় আকারের হতে পারে। এক রকমের আঠা জাতীয় পদার্থ থাকার জন্য গুটিকা থেকে ক্ল্যামাইডোস্পোর জাতীয় অনুজীব সহজে বের হয় না। সাধারণত কোনো শীষে কয়েকটা ধানের বেশি আক্রমণ হতে দেখা যায় না। 

    রোগের প্রতিকার: সঠিক মাত্রায় ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হবে। জমির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। আক্রান্ত গাছ বা শীষ তুলে ফেলা এ রোগ দমনের সবচেয়ে ভালো উপায়। তবে এটি সকাল বেলা আক্রান্ত শীষ পলিব্যাগে সাবধানে আবদ্ধ করে গাছ তুলতে হবে যাতে স্পোর ছড়াতে না পারে। জমিতে রোগ দেখা দিলে কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন- ডিফেন্স ৩৫এসসি বা অটোস্টিন বা নোইন ১.৫ গ্রাম/লিটার হারে অথবা প্রোপিকোনাজোল (টিল্ট ২৫০ ইসি) বা কোগার ০১ মিলি/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। 

    BLB
    ব্যাকটেরিয়াজনিত পোড়া রোগ (Bacterial Blight) 

    রোগের কারনঃ জ্যানথোমোনাস অরাইজি পিভি অরাইজি (Xanthomonas oryzae pv.oryzae) এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে হয়ে থাকে। 

    রোগের বিস্তারঃ রোগটি আউশ, আমন ও বোরো এ তিন মৌসুমেই ব্যাপকভাবে দেখা যায়। উচ্চ তাপমাত্রা (২৬-৩০ ডিগ্রি সে.), ৭০% এর ওপরে আপেক্ষিক আর্দ্রতা, ঝড়ো-বৃষ্টি আবহাওয়া, রোগপ্রবণ জাত লাগানো, রোপণের সময় শিকড় অথবা গাছে ক্ষত সৃষ্টি, উচ্চ মাত্রায় ইউরিয়া সার প্রয়োগ ইত্যাদির কারণে রোগের প্রকোপ বেশি হয়। পাতাপোড়া রোগ ধানের খড়, মাটি, পোকা, বাতাস ও সেচের পানির মাধ্যমে এক জমি থেকে অন্য জমিতে ছড়ায়। 

    ব্যাকটেরিয়াজনিত পোড়া রোগের লক্ষণ 

    প্রথমে পাতার অগ্রভাগ বা কিনারায় নীলাভ পানিচোষা দাগ দেখা যায়। দাগগুলো আস্তে আস্তে হালকা হলুদ রঙ ধারণ করে পাতার অগ্রভাগ থেকে নিচের দিকে বাড়তে থাকে। শেষের দিকে আংশিক বা সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায় এবং ধূসর বা শুকনো খড়ের রঙ ধারণ করে। ফলে গাছটি প্রথমে নেতিয়ে পড়ে ও আস্তে আস্তে পুরো গাছটি মরে যায়। চারা ও কুশি অবস্থায় সাধারণত ক্রিসেক লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ রোগের ফলে গাছটি প্রথমে নেতিয়ে পড়ে ও আস্তে আস্তে পুরো গাছটি মরে যায়। অনেক সময় এ রোগের লক্ষণের অগ্রভাগ দিয়ে ব্যাকটিরিয়ার কোষগুলো বেরিয়ে আসে এবং কোষগুলো একত্রে মিলিত হয়ে ভোরের দিকে হলদে পুঁতির দানার মতো গুটিকা সৃষ্টি করে এবং এগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়ে পাতার গায়ে লেগে থাকে। পরবর্তীকালে পাতার গায়ে লেগে থাকা জলকণা গুটিকাগুলোকে গলিয়ে ফেলে, ফলে এ রোগের জীবাণু অনায়াসে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত গাছের কা- ছিড়ে চাপ দিলে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজের মতো তরল পদার্থ বের হয়। রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য বেশি (৮-১০ ডিগ্রি সে.) হলে কচি পাতায় ফ্যাকাশে হলুদ বর্ণের লক্ষণটি প্রকাশ পায়। 

    ব্যাকটেরিয়াজনিত পোড়া রোগের প্রতিকার 

    ১। রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করতে হবে। রোগাক্রান্ত জমির ধান কাটার পর নাড়া ও খড় পুড়িয়ে ফেলতে হবে। চারা উঠানোর সময় যেন শিকড় কম ছিড়ে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা। সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার ও ইউরিয়া সার ৩/৪ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু রোগ দেখার পর ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। ক্রিসেক আক্রান্ত জমি শুকিয়ে ৫-১০ দিন পর আবার পানি দিতে হবে। রোগ দেখার পর বিঘাপ্রতি অতিরিক্ত ০৫ কেজি পটাশ সার ছিপছিপে পানিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ০১ গ্রাম হারে চিলিটেড জিংক স্প্রে করলে রোগের তীব্রতা কমে যায়। 

    ২। ব্যাকট্রল বা ব্যাট্রবান বা ব্যাকটাফ বা টিমসেন অনুমোদিত মাত্রায় ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

    No comments